Thursday , 21 November 2024

গোয়ালন্দে অন্তারমোড়-বেতকা নৌপথে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন পদ্মা পাড়ি

॥ আবুল হোসেন, রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি ॥

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নাম বেতকা-রাখালগাছি। এই অঞ্চলের মানুষজনের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা।

প্রতিদিন উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের অন্তারমোড় থেকে বেতকা-রাখালগাছি এলাকায় ইঞ্জিন চালিত নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে। বর্ষাকালে এই নৌপথের দূরুত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। শুষ্ক মৌসুমে নৌপথের দুরত্ব আরো কমে ২০ কিলোমিটারে দাড়ায়।

 

প্রতিদিন দুটি বড় নৌকা চলাচল করে। একেক গ্রুপে ৪-৬টি নৌকা নির্ধারণ থাকে। প্রতিদিনের যাত্রীর ভাড়া ভাগ করে নেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে এভাবে ১৪টি নৌকা চলাচল করে। ঝড়-বৃষ্টির সময় অনেক বেকায়দায় পড়তে হয়।

দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় জানায়, দেবগ্রাম ১নম্বর ওয়ার্ড বেতকা-রাখাল গাছি অঞ্চলে সহ¯্রাধিক পরিবারের তিন হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করেন। ভোটার রয়েছে প্রায় এক হাজারের মতো। বেতকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া নেই কোন প্রতিষ্ঠান, বাজার, স্থাপনা। চার বছর আগে পাবনা থেকে এ অঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। জরুরি যে কোন বিপদ মোকাবেলায় তাদেরকে নৌকার ওপর নির্ভর করতে হয়।

ছোটভাকলা ইউপির চরবরাট অন্তার মোড় থেকে দেবগ্রামের বেতকা-রাখালগাছি খেয়াঘাট ভগবানের খেয়া ঘাট হিসেবে পরিচিত। শুষ্ক মৌসুমে নদী পাড়ি দিতে সময় লাগে প্রায় ৪০ মিনিট। বর্ষাকালে লেগে যায় এক-দেড় ঘন্টার মতো। বছরের অর্ধেকটা জুড়ে পদ্মা নদী ভরপুর থাকে। উত্তাল পদ্মা পাড়ি দিয়ে তাদের গোয়ালন্দ বা রাজবাড়ী জেলা সদরে আসতে হয়।

প্রতি বছর পয়লা বৈশাখে দেবগ্রাম ও ছোটভাকলা ইউপির অধিন খেয়া পারাপারের ইজারা দেওয়া হয়। দুই ইউনিয়নের অনুকূলে বছরে প্রায় ১৫-১৮ হাজার টাকা রাজস্ব আসে। ১৪টি ইঞ্জিন চালিত বড় ট্রলারে যাত্রী ও ছোট যানসহ প্রতিদিন প্রায় দুই-তিন হাজার যাত্রী পারাপার হয়। স্বল্প সময়ে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী যাতায়াতে অনেকে এই ঘাট ব্যবহার করে।

৩ আগষ্ট বুহস্পতিবার দেখা যায়, উত্তাল পদ্মা পাড়ি দিতে অনেকে অন্তারমোড় নদীর পাড়ে জড়ো হয়েছেন। স্থানীয়ভাবে এখানে একাধিক দোকান গড়ে উঠলেও যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা নেই।

অনেক কৃষক আছেন যাদের রাখালগাছি-বেতকায় ফসল আবাদের জন্য যাতায়াত করে থাকেন। নদীর পাড়ে ছোট্ট টিনের ছাউনির নিচে বসে আছেন ইজারাদারের লোকজন।

পাবনার বেড়ার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, জরুরি কিছু কাজ থাকায় মঙ্গলবার রাজবাড়ী এসেছিলাম। কাজ শেষে আজ সকালে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেছি। সড়ক পথের চেয়ে রাজবাড়ী শহর থেকে মাত্র ২৫ টাকায় অন্তারমোড় ঘাটে আসলাম। এরপর এক ঘন্টার মতো নৌকায় নদী পাড়ি দিয়ে রাখালগাছি পাকা সড়কে নামবো। সেখান থেকে অল্প সময়ের মধ্যে বাড়ি ফিরে যাব।

নৌকার মাঝি সোহেল রানা বলেন, প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টায় বেতকা-রাখালগাছি সিএমবি সড়ক থেকে অন্তারমোড়ের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। অন্তার মোড় থেকে সকাল সাড়ে ৮টার পর বেতকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বিকেল সাড়ে ৪টায় বেতকা থেকে শেষ ট্রিপ ছেড়ে সাড়ে ৫টায় পুনরায় ছেড়ে যাই।

প্রতিদিন দুটি বড় নৌকা চলাচল করে। একেক গ্রুপে ৪-৬টি নৌকা নির্ধারণ থাকে। প্রতিদিনের যাত্রীর ভাড়া ভাগ করে নেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে এভাবে ১৪টি নৌকা চলাচল করে। ঝড়-বৃষ্টির সময় অনেক বেকায়দায় পড়তে হয়। মাঝে মধ্যে রাতের বেলায় সন্তান প্রসব বা জরুরি চিকিৎসার ক্ষেত্রে ছুটতে হয়।

খেয়াঘাট পরিচালনাকারী ইজারাদার ভগবান চৌধুরীর নাতি জয়দেব চৌধুরী বলেন, পেশাদার পাটনি হিসেবে আমরা বহু বছর ধরে ঘাটটি পেয়েছি। এ বছর বেগ্রাম ইউপির ১০ হাজার এবং ছোটভাকলা ইউপি থেকে ৮ হাজার টাকায় এক বছরের জন্য ঘাট নেয়া হয়েছে।

প্রতিদিন খরচ বাদে বাকি টাকার ২০ শতাংশ নিয়ে থাকি। যাত্রীদের বসারস্থানসহ ঝড়বৃষ্টিতে সমস্যার ব্যাপারে বলেন, এত অল্প আয় দিয়ে তেমন কিছু করা সম্ভবনা। তবে আবহাওয়া পরিস্থিতি দেখেই ট্রলার ঘাট ছাড়া হয়।

দেবগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, অন্তারমোড়-বেতকা দিয়ে প্রতিদিন দুই-তিন হাজার মানুষ পারাপার হয়। রাখালগাছির সাথে রয়েছে পাবনার ঢালারচর রেলষ্টেশন ও পাকা সড়ক। নদী পাড়ি দিয়ে রাখালগাছি পৌছেই পাবনা, রাজশাহী অঞ্চলের মানুষজন ট্রেনে যাতায়াত করেন।

তিনি বলেন, ঢালারচর রেলষ্টেশন থেকে রাখালগাছি পর্যন্ত পাকা রাস্তা হয়েছে। জায়কার প্রকল্পের মাধ্যমে ওই রাস্তা থেকে নদীর পাড় পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তার কাজ শেষের দিকে। অন্তারমোড় থেকে বেতকা ঘাট পর্যন্ত নদীর ওপর সেতু হলে রাজবাড়ীর সাথে পাবনা অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক সহজ উন্নত হবে।

Check Also

মোংলায় রান্না ঘর থেকে আগুনে পুরলো দিন মজুরের মাথা গোজার ঠাই

॥ মাসুদ রানা, বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি ॥ মোংলায় আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে এক দিন মজুরের …