॥ শেখ রানা, দোহার-নবাবগঞ্জ প্রতিনিধি ॥
আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল আযহাকে সামনে রেখে হাতুরীর টুংটাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন বাজারের কামার পল্লি। বর্তমানে কামার শিল্পের সঙ্গে জড়িত মালিক ও শ্রকিরা কোরবানির পশু জবাই সরাঞ্জাম তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কোরবানির পশু জবাই ও গোশত প্রস্তুতের জন্য ব্যবহৃত দা, বঁটি, ছুরিসহ প্রয়োজনীয় অন্য সব উপকরণ তৈরিতে এখন দিনরাত কাজ করছেন মালিক-শ্রমিকরা। সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিরামহীনভাবে জ্বলছে কামার দোকানের চুলার আগুন।
কামার সিফুচন্দ্র কর্মকার বলেন, কোরবানীর ঈদ আসলে এ কাজের চাপ একটু বাড়ে। কিন্তু অন্যান্য সময় সারা বছর তেমন এ কাজ থাকে না। তবে ধীরে ধীরে এ কাজের পরিধি একটু বাড়তেছে।
শুক্রবার (১৬ জুন) দুপুরে দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন বাজার সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, চারদিকে হাতুরী পেটানোর টুংটাং শব্দ। কেউ ভারী হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছেন দগদগে লাল লোহার খন্ড, আবার কেউ শান দিচ্ছেন ছুরি কিংবা বঁটি-চাপাতি, কেউবা আবার কয়লার আগুনে দিচ্ছেন বাতাস ।
দোহার উপজেলার জয়পাড়া, মেঘুলা, নারিশা, কার্তিকপুর, কাচারীঘাট, পালামগঞ্জ ও লাটাখোলা বাজার, অপরদিকে, নবাবগঞ্জের নবাবগঞ্জ সদর, বান্দুরা, বাড়ৈখালী, ধুলসরা বাজার একলাকায় প্রায় ৩০টির মতো কামারের দোকান রয়েছে। প্রতি দোকানে কারিগরসহ গড়ে ২/৩ জন কাজ করেন। তবে ঈদের সময় প্রতি দোকানে ৪/৫ জন করে লোক প্রয়োজন হয়।
এ বিষয়ে জায়পাড়া বাজারের কামার মোঃ রাসেল বলেন, লোহা ও কয়লার দাম যেভাবে বেড়েছে, সেভাবে আমাদের তৈরি পণ্যের দাম বাড়েনি। বর্তমানে প্রকারভেদে বঁটির দাম ৪শ’ থেকে ২/৩ হাজার টাকা, গরু জবাইয়ের ছুরি পাঁচশ’ থেকে ১৮শ’ টাকা, চাপাতি ছয়শ’ থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া অন্যান্য ছুরি ২শ’ থেকে ৫শ’ টাকায় বিক্রি করছি। তবে অন্যান্য সময়ের তুলনায় ঈদ সিজনে প্রতিটি পণ্যের দাম কিছুটা বেড়ে যায়।
কামার মধু কর্মকার বলেন, সারা বছর তেমন এসব লোহার সরঞ্জাম তৈরীর কাজ থাকে না। কারণ এখন আর আগের মত কৃষি কাজ নাই। আগে যেমন খেত খোলায় অনেক কাজ হত আর সেখানে লাঙ্গলের ফলা, টানা কাচি, ঠেলা কাচি, নিরাণী কাচি ব্যবহার করত কিন্তু এখন তা আর নাই। আর বছরে একবার কোরবানির ঈদ আসলে একটু কাজ হয়। কিন্তু সারা বছর আর আগের মতো এ কাজে তেমন হয় না।
কামার সিফুচন্দ্র কর্মকার বলেন, কোরবানীর ঈদ আসলে এ কাজের চাপ একটু বাড়ে। কিন্তু অন্যান্য সময় সারা বছর তেমন এ কাজ থাকে না। তবে ধীরে ধীরে এ কাজের পরিধি একটু বাড়তেছে।
নবাবগঞ্জের কামার সঞ্জীত কর্মকার বলেন, বাপ-দাদার পেশা হিসেবে লোহা পেটানোর কাজ করে আসছি। বর্তমানে এ কাজ খুবই কমে গেছে। বাবা, দাদারা এ কাজ শিখিয়ে গেছেন তাই তাদের পেশাকে ধরে রেখেছি।