নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ঈদ সামগ্রী বিতরণ ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে এসেছি ….সালমা ইসলাম

এবারও আপনাদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে আমার স্বামীর নামে প্রতিষ্ঠিত ‘নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশন’ এর পক্ষ থেকে ঈদে উপহার নিয়ে এসেছি। দোয়া করবেন নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশন যেন সব সময় আপনাদের পাশে থাকতে পারে। ঢাকার নবাবগঞ্জে নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে দোহার-নবাবগঞ্জ উপজেলার দরিদ্র মানুষের জন্য ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণী অনুষ্ঠানে নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও যমুনা গ্রæপের চেয়ারম্যান এ্যাড. সালমা ইসলাম এসব কথা বলেন। মঙ্গলবার সকালে বর্ধনপাড়ার এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন সালমা ইসলাম। একইদিন উপজেলার আগলা, চ‚ড়াইন, গালিমপুর, বক্সনগর, কৈলাইল ও শোল্লা ইউনিয়নের প্রায় দশ হাজার পরিবারের মাঝে এসব ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরন করা হয়।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশনের ঈদ উপহার নিতে আসা পুরুষদের পাশাপাশী নারীদের দীর্ঘ লাইন। সবাই সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে অপেক্ষার করছেন উপহার নেওয়ার জন্য। নারীদের কাপড় ও পুরুষদের লুঙ্গি তুলে দিচ্ছেন যমুনা গ্রæপের চেয়ারম্যন সালমা ইসলাম। এছাড়া ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এতিমখানা ও মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ঈদ উপহার হিসেবে লুঙ্গি দেওয়া হয়।

এসময় কথা হয় বৃদ্ধা আলেকজান বেগমের সাথে। তিনি বলেন, আমার স্বামী নাই। ছেলে সাথে থাহি। সংসারের ৬জন মানুষ। ও কামলা দিয়ে (কাজ করে) যা কামাই করে তাই দিয়ে কোন মত খেয়ে বাইচা আছি। নতুন কাপড় কেনার সামধ্য আমাগো নাই। তাই প্রতিবছর আশায় থাকি, সালমা ম্যাডাম কহন নতুন কাপড় দিব। সেই কাপড় ঈদে পড়–ম। তার কথা শেষ হতে না হতেই কথা শুরু করেন তার সাথে আসা রহিমা বেগম। তিনি বলেন, বাবা কয়জন গরিবের খবর রাখে। একমাত্র সালমা ম্যাডামকে দেহি অনেক বছর ধরে ঈদ, শীতসহ যেকোন বিপদ আপদ এবং উৎসবে আমাদের বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী, পোশাক বিতরণ করে থাকেন। দোয়া করি আল্লাহ যেন তারে দীর্ঘদিন বাঁচাইয়া রাখে। এবং তার স্বামী নুরুল ইসলাম বাবুলকে বেহেস্ত নসিব করেন।

লুঙ্গি পেয়ে কেমন লাগছে প্রশ্ন করতেই চোখ টলমল করে উঠে ভিক্ষুক আক্কাস উদ্দিন। তিনি বলেন, আমি ঠিকভাবে চলাফেরা করতে পারি না। তাই ভিক্ষা করে সংসার চালাই। আমার মত মানুষের ঈদে নতুন লুঙ্গি কেনার সামর্থ্য নাই বাবা। কিন্ত সালমা ম্যাডামের উছিলায় কয়েকবছর ধরে নতুন লুঙ্গি পরেই ঈদের নামাজ পড়তে পারি। আইজ নতুন লুঙ্গি পাইলাম, এটা পড়েই ঈদের নামাজ পড়ুম। হুনলাম ম্যাডামের স্বামী বাবুল ভাইয়ের নামে কি যেন একটা করছে সেখান থেকে এবার আমাদের লুঙ্গি ও মহিলাদের কাপড় দিছে। বাবুল ভাইয়ের জন্যও আমি দোয়া করি।

ঈদ উপহার হিসেবে লুঙ্গি পেয়ে খুঁশি বিভিন্ন এতিমখানা ও মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলেন, আসলে লুঙ্গিটা বড় বিষয় না। সালমা ম্যাডাম নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে যে আমাদের স্মরণ করেছেন এটা বড় প্রাপ্তি। তাঁরা আরো বলেন, বর্তমান সমাজে আলেমদের কথা কেউ ঐভাবে চিন্তা করেন না। সেদিক দিয়ে নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশন নজির স্থাপন করলেন। ছোট উপহারও মানুষের মনে প্রশান্তি এনে দেন এটা তার প্রমাণ। আমরা সব সময় দোয়া করি, যার নামে ফাউন্ডেশনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেই মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বাবুল সাহেবকে যেন আল্লাহ বেহেস্ত দান করেন এবং সালমা ম্যাডামকে যেন সুস্বাস্থ্য দান করেন।

নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশনের সংশ্লিষ্টরা জানান, শান্তি-শিক্ষা-সেবা ও সামাজিক উন্নয়নই নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশনের মূল লক্ষ্য। পারস্পারিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও পরোপকারের মাধ্যমে বিশ্বমানবতার কল্যাণেই এর যাত্রা। আর্তমানবতার সেবা, সমাজ সংস্কার, কর্মসংস্থন তৈরি, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, দারিদ্র বিমোচন, এতিম, গরিব, বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের ভরণ-পোষণ, ছিন্নমুল ও পথবাসিদের পুনর্বাসন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানসহ সব শ্রেণির নাগরিকের নৈতিক ও চারিত্রিক উন্নয়নের মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর দেশ গড়ার দীর্ঘ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে ফাউন্ডেশনটি। সম্প্রতি শীতে দোহার ও নবাবগঞ্জে কয়েক হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া অসহায় ও দুঃস্থদের জন্য নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে।