॥ ইউসুফ সুমন, বাগেরহাট প্রতিনিধি ॥
অকাল প্রয়াত কবি, গবেষক, প্রাবন্ধিক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. হিমেল বরকতের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার (২২ নভেম্বর) রুদ্র স্মৃতি সংসদ মিঠাখালী, সস্মিলিত সাস্কৃতিক জোট মোংলা, সর্বদলীয় সম্প্রীতি উদ্যোগ, মিঠাখালী সিদ্দিক বাজার বণিক সমিতিসহ বিভিন্ন রাজনৈক দল ও বিভিন্ন সামাজিক এবং পেশাজীবি সংগঠনের যৌথ আয়োজনে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
হিমেল বরকত ছিলেন একাধারে অধ্যাপক, খ্যাতিমান কবি, প্রাবন্ধিক, গীতিকার ও সাহিত্য গবেষক। মাত্র ৪৩ বছর বয়সেই তিনি বাংলা সাহিত্যাংগনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন।
বেলা ১১টায় কবি হিমেল বরকতের বাড়িতে স্মরণানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রুদ্র স্মৃতি সংসদের সভাপতি সাংবাদিক সুমেল সারাফাত। বক্তব্য রাখেন শিরিয়া বেগম বালিকা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক ওবায়দুল ইসলাম, কবি হিমেল’র বাল্য বন্ধু জানে আলম বাবু, বিশিষ্ট গীতিকার মোল্লা মামুন, মিঠাখালী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবুল হোসেন প্রমুখ। আলোচনা শেষে হিমেল বরকতের লেখা গান পরিবেশন করে অন্তর বাজাও শিল্পী গোষ্ঠী।
সভায় বক্তারা বলেন, হিমেল বরকত ছিলেন একাধারে অধ্যাপক, খ্যাতিমান কবি, প্রাবন্ধিক, গীতিকার ও সাহিত্য গবেষক। মাত্র ৪৩ বছর বয়সেই তিনি বাংলা সাহিত্যাংগনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। হিমেল বরকতের প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো- চোখে চৌদিকে (২০০১), দশ মাতৃক দৃশ্যাবলি (২০১৪), গবেষণাধর্মী গ্রন্থ প্রান্তস্বর ব্রাত্যভাবনা (২০১৭), সাহিত্য সমালোচক বুদ্ধদেব বসু গবেষণা গ্রন্থ (২০১৩), ছড়ায় ছড়ায় প্রকৃতির বিস্ময়, ছোট গল্প আয়না এবং পেনসিল ও রাবারের গল্প।
প্রসঙ্গত, ড. হিমেল বরকত ১৯৭৭ সালের ২৭ জুলাই বাগেরহাট জেলার মোংলার মিঠেখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। হিমেল বরকত প্রয়াত কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর ছোট ভাই।
হিমেল বরকত ১৯৯৪ সালে মোংলার সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৯৬ সালে ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং পরবর্তী সময়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স-মাস্টার্স ও ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।
ঢাকা সিটি কলেজে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে ২০০৫ সালে হিমেল বরকতের কর্মজীবন শুরু হয়। ২০০৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন এবং ২০১৮ সালের ৫ জুন অধ্যাপক হন। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত এখানেই তিনি কর্মরত ছিলেন।
হিমেল বরকত সম্পাদিত গ্রন্থগুলো হলো রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ রচনাবলী (২০০৫), কবি ত্রিদিব দস্তিদারের কবিতা সমগ্র (২০০৫), চন্দ্রাবতীর রামায়ণ ও প্রাসঙ্গিক পাঠ (২০১২), রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর শ্রেষ্ঠ কবিতা (২০১২), বাংলাদেশের আদিবাসী কাব্যসংগ্রহ (২০১৩), রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ স্মারকগ্রন্থ (২০১৫) ও রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর প্রেমের কবিতা নিয়ে অনুকাব্য। এ ছাড়া অপ্রকাশিত রয়েছে হিমেলের বেশ কিছু কবিতার বই ও গান।