॥ মনিরুজ্জামান মনি, সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি ॥
সু ন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে ভারতীয় বিএসএফ কর্তৃক পুশ-ইন হওয়া ৭৮ জনের মধ্যে ৭৫ জন বাংলাদেশি মুসলিম নাগরিককে স্বজনদের জিম্মায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া ৩জন ভারতীয় নাগরিককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার (১৩ মে) দুপুর ১২টায় সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।ভারতের নাগরিক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ‘The Control of Entry Act 1952’-এর ৪ ধারায় একটি নিয়মিত মামলা (শ্যামনগর থানার মামলা নম্বর-১৫) রুজু করা হয়েছে।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ জানান, গত ৯ মে ভোররাতে ভারতীয় বিএসএফ গোপনে সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে ৭৫ জন বাংলাদেশি ও ৩ জন ভারতীয় মুসলিম নাগরিককে জোরপূর্বক রেখে যায়। এদের অধিকাংশই দীর্ঘদিন ধরে ভারতের গুজরাট রাজ্যে বসবাস করতেন এবং বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বিষয়টি জানতে পেরে ১০ মে ওইসব ব্যক্তিদের উদ্ধার করে পরদিন রাতেই শ্যামনগর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পরবর্তীতে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামের দিক-নির্দেশনায় যাচাই-বাছাই শেষে দেখা যায়, হস্তান্তরকৃতদের মধ্যে ৬৩ জন নড়াইল জেলার, খুলনার ৬ জন, যশোরের ২ জন, শরীয়তপুর, বরিশাল ও ঢাকা জেলার একজন করে রয়েছেন।
১৩ মে, মঙ্গলবার ৭৫ জনকে তাদের প্রকৃত স্বজনদের নিকট সাধারণ ডায়েরি, জাতীয় পরিচয়পত্র, জিম্মানামা ও মুচলেকা গ্রহণের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হয়। এরআগে রাতে তাদের থাকার ব্যবস্থা, খাবার এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থাও করে উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ।
এদিকে ভারতীয় ৩ নাগরিক সম্পর্কে ওই কর্মকর্তা জানান, আব্দুর রহমান (২০), মো. হাসান শাহ (২৪) ও সাইফুল শেখ (১৯) — জন্মসূত্রে ভারতের নাগরিক হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ‘The Control of Entry Act 1952’-এর ৪ ধারায় একটি নিয়মিত মামলা (শ্যামনগর থানার মামলা নম্বর-১৫) রুজু করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেকেরই জন্মস্থান গুজরাটের নেহেরীনগর, জোপারপচ্চি এলাকায় এবং অভিভাবকরাও গুজরাটে অবস্থানকালে তাদের জন্ম হয় বলে এজাহারে উল্লেখ রয়েছে।
তবে জন্ম সূত্রে ওই তিন ভারতীয় নাগরিকের মা-বাবা সবাই বাংলাদেশী বলে জানা গেছে। যার মধ্যে আব্দুর রহমান খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা থানার খালিদ শেখ ও কাকলী দম্পতির ছেলে, মো. হাসান শাহ নড়াইল জেলার কালিয়া থানার বিষ্ণুপুর গ্রামের মৃত মুন্না শাহ ও মৃত নুরজাহান বেগমের ছেলে, এবং সাইফুল শেখ সোহেল শেখ ও সাবিনা দম্পতির ছেলে।
জিজ্ঞাসাবাদে পুশ-ইন হওয়া ব্যক্তিরা জানান, গত ২৬ এপ্রিল গভীর রাতে ভারতীয় প্রশাসন তাদের বাড়ি থেকে আটক করে। পরে ৯ মে গোপনে সুন্দরবনের চরে এনে ফেলে যায়। এরপর তারা মান্দারবাড়ি ফরেস্ট অফিসে গিয়ে আশ্রয় নেন এবং সেখান থেকে কোস্টগার্ডকে অবহিত করেন। তাদের মধ্যে ১০ জন গুরুতর অসুস্থ ছিলেন বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনায় মানবাধিকারকর্মীরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ভবিষ্যতে এমন পুশ-ইন রোধে কার্যকর কূটনৈতিক পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।