॥ মাসুদ রানা, বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি ॥
বন্দর নগরী মোংলা সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গেটের সামনেই গড়ে উঠেছে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। আবার সেই ক্লিনিকে চিকিৎসা দিচ্ছেন ওই সরকারী হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা।
মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শাহিন বলেন, সরকারী হাসপাতালের সামনে ক্লিনিক করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আবেদন করলে এর প্রতিবেদন দীর্ঘ ৮ মাস বন্ধ রাখা হয়েছিল।
এছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই মানহীন। বিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় চাহিদার নুন্যতম সামগ্রী বিদ্যমান নেই এসব প্রতিষ্ঠানে। শুধু তাই নয়, সরকারি হাসপাতাল থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের যে নিয়ম রয়েছে, সে সকল সরকারী আইনকে তোয়াক্কা না করে সরকারি হাসপাতালের সামনেই গড়ে তোলা হয়েছে এসব বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। হাসপাতালের নিযুক্ত রয়েছে দালাল, ফলে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন গ্রামাঞ্চল থেকে চিকিৎসা নিয়ে আসা সাধারন রোগী ও স্বজনরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোংলা-রামপাল ও শরনখোলা-মোড়েলগঞ্জের মানুষ অসুস্থ হলেই স্বল্প সময়ের মধ্যে মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আসে ভাল মানের চিকিৎসা নেয়ার জন্য। গরিব ও অসহায় রোগীরা সরকারী হাসপাতালের প্যাথলজি থেকে স্বল্প খরচে পরিক্ষা-নিরিক্ষ সেরে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবে এমনটাই আশা তাদের। কিন্ত এই হাসপাতালটির সামনেই গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক।
বিশেষ করে সাহপাতালটির মেইন গেটের ১০ হাত সামনেই রয়েছে রাতুল ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। আবার সেখানে বসেই অপারেশনসহ চিকিৎসা দিচ্ছে ওই সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসকরা। সরকারী প্রতিষ্ঠানের সামনে গড়ে ওঠা আর এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত বেতনভুক্ত দালালরা সরকারি হাসপাতালের রোগীদের ভাগিয়ে নিচ্ছে বলে বহু অভিযোগ রয়েছে। ওই হাসপাতালের এক শ্রনীর ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ড বয় ও আয়ারাও রোগী ভাগিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে নির্ধারিত কমিশনও পাচ্ছেন।
খোদ ওই হাসপাতালের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতর্তার নাকের ডগায় বিধিবহির্ভূত ও মানহীন এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে নেই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। ফলে চিকিৎসা পাওয়ার বদলে প্রতারিত হচ্ছে দুর-দুরান্ত থেকে আসা গরিব অসহায় সাধারণ মানুষরা।
সরকারী আইনানুযায়ী সরকারি হাসপাতাল থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপন না করার নিয়োম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না মোংলা এলাকায়। মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে ১০/১৫ হাতের মধ্যে গড়ে উঠেছে ১০টির মতো ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও রাতুল ক্লিনিক। শুধু তাই নয়, এ হাসপাতালের আশপাশে আরো ছোট-বড় বেশ কয়েকটি বেসরকারি ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠার পরিকল্পনাও চলছে।
এসকল বেসরকারী ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে পরিক্ষা-নিরিক্ষা ও চিকিৎসার নামে সাধারন রোগী, স্বজনদের কাজ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা, ফলে মালিক পক্ষের চলছে রমরমা প্রতারনার বাণিজ্য। এই বেসরকারি রাতুল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে ওঠার পিছনে রয়েছে সরকারী হাসপাতালের ডাক্তার ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের প্রত্যাক্ষ-পরক্ষ্য সহযোগীতা। অভিযোগ রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মাসোয়ারা পাওয়ার কারণে চুপ থাকেন সিভিল সার্জন অফিসসহ দেখবাল করার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের থেকে বের হলেই সামনেই চোঁখে পড়বে চাকচিক্যের মোড়কে অনুমোদনহীন রাতুল ক্লিনিকের সাইনবোর্ড। সরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের দিকে দৃষ্টি থাকে ওই ক্লনিক মালিকের। রোগী ভাগিয়ে নেয়ার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে বেশ কয়েকজন দালালও।
রোগী ধরার ফাঁদ পেতে বসে থাকে এসকল দালালরা। অভিযোগ রয়েছে, যখনই একজন রোগী এসে হাসপাতালে ভর্তি হয়, তখনই তাদের কাছে গিয়ে আত্নীয় বা এলাকার পরিচিত কারো পরিচয় দিয়ে শুরু করে প্রত্যারনা অভিনয়। দেখানো হয় তার ক্লিনিকে খুলনা বা ঢাকা থেকে আসা বড় বড় ডাক্তারের গুনগান ও ফিরিস্তি। পরিক্ষা-নিরিক্ষও উন্নতমানের এমন প্রতারনার ফাঁদ পেতে ভাগিয়ে নেয়া হয় তার ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।
সেখানে চিকিৎসার বালাই নেই কিন্ত টাকা আদায়ের যত কলাকৌশল সবই তাদের জানা। গ্রামাঞ্চল থেকে আসা রোগীদের বিভিন্ন অজুহাতে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। আর এই চিকিৎসাসেবার ভার বহন করতে গিয়ে অনেকেই হারিয়েছেন মূল্যবান অনেক কিছু।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত রাতুল ক্লিনিকের এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক জাহাঙ্গির হোসেন বলেন, সরকারী নিয়োম-নীতি অনুযায়ী ক্লিনিক করা হয়েছে। তবে সরকারী হাসপাতালের সামনে হলেও সেখানে আসা কোন রোগীদের আমার প্রতিষ্ঠানে আনা হয়না।
মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শাহিন বলেন, সরকারী হাসপাতালের সামনে ক্লিনিক করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আবেদন করলে এর প্রতিবেদন দীর্ঘ ৮ মাস বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী কাগজপত্র সম্পন্ন করে রাতুল ডায়াগনিস্ট থেকে ক্লিনিক খুলে বসেছে। যখন থেকে ক্লিনিক খুলেছে সেই সময় থেকেই ওই প্রতিষ্ঠানে আমি রুগি দেখা বন্ধ করে দিয়েছি। আমি এ হাসপাতালে আসার পর প্রসুতি মায়ের অপারেশন সহ এখানের আমুল পরিবর্তন হয়েছে। যতদিন এই হাসপাতালে থাকবো, ততদিন সরকারী এ প্রতিষ্ঠানের সুনার অক্ষুন্ন রাখার চেষ্টা করবো।
জেলা সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ হাবিবুর রহমান জানান, বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনিস্টক সেন্টারের নিবন্ধন দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্ত আমরা শুধু তদারকি করি। আইন না মেনে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন পেয়ে বা নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান শর্ত ভঙ্গ করে অসঙ্গতী কিছু করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিবো আমরা। এছাড়া ওই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আরো এসেছে, আমরা ওই প্রতিষ্ঠানকে নজরদারীতে রেখেছি। অভিযোগের সত্যতা পেলেই এ ক্লিনিক বন্ধের ব্যাবস্থা করা হবে।
পরবর্তী ফলোয়াপ নিউজে থাকবে কে এই জাহাঙ্গীর…?