॥ বিশেষ প্রতিবেদক ॥
সিএকই মঞ্চে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা-১ আসনের এমপি প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন। এই আসনে খন্দকার আবু আশফাক বিএনপি’র পক্ষে এবং ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে এমপি প্রার্থী নির্বাচন করবেন।
আমরা একটি সুখী সমৃদ্ধশালী সুন্দর সমাজ গড়ার প্রত্যয় গ্রহণ করি। ইনশাআল্লাহ্ আগামীর সকালটা হবেই তো সুন্দর। আমাদের বক্ষের তরতাজা রক্তে।
প্রধান অতিথি খন্দকার আবু আশফাক এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম। শনিবার নবাবগঞ্জ উপজেলার বারুয়াখালিতে আয়োজিত ড. মিজানুর রহমান আজহারীর মাহফিলে এক বক্তব্যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
খন্দকার আবু আশফাক তার বক্তব্যের শুরুতে বলেন, ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম বহু বছর গত ফ্যাসিস্ট সরকারের রোষানলে পরে নিজে দেশের মাটিতে পা রাখতে পারেনি, তাকে বিদেশে থাকতে হয়েছে। একটি ভোট চোর অবৈধ সরকারের কবলে পড়ে দেশকে রসাতলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ ১৬-১৭টি বছর আমরা ঘরে থাকতে পারিনি। শত শত মামলায় ভুগেছি। সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে।
আমরা নতুনভাবে একটি স্বাধীনতা পেয়েছি। যেকোনো মূল্যে আমরা এই স্বাধীনতা রক্ষা করবো। আজকের এই বিশাল আয়োজনে প্রধান বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারী এসেছেন। তিনি কিন্তু নিজেও বহু বছর ফ্যাসিস্ট সরকারের রোষানলে পড়ে দেশে আসতে পারেনি। এভাবে কিন্তু আমরাও বহু বছর একত্রিত হতে পারিনি। আমাদেরকে একত্রিত হতে দেয়া হয়নি। এমনকি দেশেও থাকতে দেয়া হয়নি।
এখন আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি। এই স্বাধীনতার ফল আমরা সবাই মিলে ভোগ করতে চাই। সকলে মিলে সুন্দর একটি সমাজ গড়তে চাই। সুন্দর একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যারা এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে, তাদের বিরুদ্ধেও আমরা আবার একইভাবে রুখে দাঁড়াবো। তিনি শ্রোতাদের কাছে প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন, এখানে যারা ৩০-৩৫ বছরের যুবক আছেন, তারা জীবনে এখনো ভোট দিতে পারেনি।
আপনারা সকলে ভোট দিতে চান? আমরা চাই আপনাদের সকলের ভোটের ব্যবস্থা করতে। আমরা ফিরিয়ে দিতে চাই আপনাদের ভোটের স্বাধীনতা। এর বাইরে কেউ কিছু করতে চাইলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবো। এর সঙ্গে যদি আমাদের দলেরও কেউ জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একই পদক্ষেপ নেবেন। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কড়া নির্দেশনা, দলের ভেতরে-বাইরে কেউ বিশৃঙ্খলা করলে তা সহ্য করা হবে না। সুতরাং আসুন, একটি সুন্দর দেশ গড়ি। আমাদের আগামী প্রজন্মকে নিয়ে যাই উন্নতির শিখরে। বিশ্বে বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে পরিগণিত করি।
এর আগে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- ঢাকা-১ আসনের বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এমপি মনোনীত প্রার্থী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম। তিনি তার বক্তৃতায় বলেন, ঢাকা জেলা বিএনপি’র সভাপতি খন্দকার আবু আসফাক বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে ঢাকার রাজপথে আন্দোলন পরিচালনা করেছেন, জেল-জুলুম হুলিয়া মাথায় নিয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন।
ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে অনেক আলোচনা হয়েছে। সেখান থেকে আমি যেটা বুঝতে পেরেছি, সেটা হচ্ছে আমরা একটা পরিবর্তন চাই। এই সমাজকে আমাদের পরিবর্তন করতে হবে। আজকে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পার হচ্ছে, কিন্তু অনেক আশা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ যে পরিবর্তন চেয়েছিল সেই পরিবর্তন কি হয়েছে? হত্যা, নৈরাজ্য, জিঘাংসা, গুম, রাহাজানির মাধ্যমে দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়া হয়েছিল। আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম?
তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টে পরিবর্তনের জন্য যুবকরা জীবন দিয়েছেন, রক্ত দিয়েছেন, জেল-জুলুম ভোগ করেছেন। কেউ চোখ হারিয়েছে, আবার কেউ পা হারিয়েছে। এই যুবকদের কাছেই ৫ই আগস্ট ফ্যাসিবাদের পতন দেখেছি। ফ্যাসিবাদ তাদের আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশ থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছে। যুবকদের আশা আকাঙ্ক্ষা ছিল দেশকে পরিবর্তন করা, একটি সুখী সমৃদ্ধশালী সুন্দর বাংলাদেশ গঠন করা। যেই বাংলাদেশ গড়ার জন্য তারা জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে- আমরা তাদের সেই রক্ত বৃথা যেতে দিতে পারি না। আজ আমাদেরকে শপথ নিতে হবে- বাংলাদেশকে আমরা পরিবর্তন করেই ছাড়বো।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দেশের ভেতরের শক্তি, বাইরের শক্তি চক্রান্ত করছে। বিশেষ করে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত প্রতিনিয়ত চক্রান্ত করে যাচ্ছে। তিনি ভারতকে সতর্ক করে বলেন, আমরা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে করে বলে দিতে চাই, আমাদের চোখ রাঙিয়ে লাভ হবে না। তাদের রক্ত চক্ষুকে আমরা কোনো পরোয়া করি না। আমরা চোখে চোখ রেখে কথা বলতে শিখেছি। আমরা আমাদের পরিবর্তন করেই ছাড়বো।
আমাদের দেশের পরিবর্তন আমরাই করবো। ওরা আমাদেরকে চেনেনি, আমরা খালিদ বিন ওয়ালিদের উত্তরসূরি, আমরা তারেক বিন জেয়াদের উত্তরসূরি, আমরা তিতুমীরের উত্তরসূরি, আমরা শরীয়ত উল্লাহ’র উত্তরসূরি। সুতরাং আমাদের ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নাই। ইনশাআল্লাহ্ জীবন যাবে, রক্ত দেবো তারপরেও এই দেশকে পরিবর্তন করে ছাড়বো। পরিবর্তনের যে ডাক এসেছে, যে সুযোগ এসেছে আসুন আমরা সবাই মিলে সেই পরিবর্তনে সামিল হই।
আমরা একটি সুখী সমৃদ্ধশালী সুন্দর সমাজ গড়ার প্রত্যয় গ্রহণ করি। ইনশাআল্লাহ্ আগামীর সকালটা হবেই তো সুন্দর। আমাদের বক্ষের তরতাজা রক্তে। কয়েক লাখ মানুষের এই মাহফিলে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা জেলার আমীর মাওলানা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন, বিশিষ্ট শিল্পপতি আক্কাছ উদ্দিন মোল্লা ও সমাজসেবক আয়ুব হোসেন চুন্নু মিয়া প্রমুখ।