॥ আরিফুল ইসলাম আরিফ, উল্লাপাড়া প্রতিনিধি ॥
ভো রের আলো ফুটেছে মাত্র। হালকা কুয়াশার চাদর সরিয়ে সূর্য যখন আলতো করে ঝুঁকে পড়ছে উল্লাপাড়ার কৃষি মাঠের দিকে, তখন আনোয়ার হোসেন হেঁটে যাচ্ছেন তার প্রিয় আখক্ষেতের দিকে। গায়ে সাদা পাঞ্জাবি, মুখে মৃদু হাসি, আর চোখে আত্মবিশ্বাসের দীপ্তি।
“আমি চাই, আরও নতুন নতুন উদ্যোক্তা যেন এ পথে আসে। মাটি কিন্তু ফিরিয়ে দেয়, যদি তুমি তাকে সময় দাও, ভালোবাসো।” আসলে এটা শুধু আনোয়ার হোসেনের গল্প নয়—এটা হাজারো কৃষকের সম্ভাবনার গল্প। যাঁরা মাটিকে সঙ্গী করে স্বপ্ন বোনেন, জীবিকার পথে নতুন আলো খুঁজে নেন।
“এই জমিই আমার সব। এই দুই বিঘা জমি নিয়ে কত না স্বপ্ন, কত হিসেব…” — আনোয়ার হোসেন বলে উঠলেন আখের কচি পাতা ছুঁয়ে যায় আমার মনটা।
গত দুই বছর ধরে তিনি নিজ হাতে গড়ে তুলেছেন এই আখক্ষেত। রীতিমতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ফিলিপাইন, রংবিলাসী এবং লটা জাতের আখ বেছে নিয়েছেন। কেউ বলেন, ‘পাগল’, কেউ বলেন, ‘অসাধারণ সাহস’। কিন্তু আনোয়ার হোসেন থেমে থাকেননি।
প্রথমদিকে ছিল নানা অনিশ্চয়তা। প্রতিবেশীরা অবাক হয়ে দেখতেন—গ্রামের চিরচেনা ধান কিংবা আলুর বদলে আখ! “সবাই তো ধানই করে, আমি একটু আলাদা কিছু করতে চেয়েছিলাম। আগ্রহ ছিল নতুন জাত নিয়ে কাজ করার,” জানালেন তিনি।
এই চাষে তার ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা—বীজ, সার, কীটনাশক, জমি চাষ, আর সেচের খরচ ধরেই। কিন্তু আশার আলোটা আরও উজ্জ্বল—তিনি আশা করছেন আখ বিক্রি করে আয় করবেন অন্তত ২ লক্ষ টাকা। শুধুই টাকা নয়, এর সঙ্গে আছে মাটি, ঘাম, স্বপ্ন আর সাহসের মিশেল।
তাঁর এই আখ চাষ দেখে কিছু স্থানীয় যুবকও একটু আয় করছেন। কেউবা বলছে, “আমিও শুরু করবো ভাই, আনোয়ার কাকা তো পারছে, আমিও পারব।” আনোয়ার হোসেন বলেন, “এই আখ তো শুধু ফসল না, এটা আমার পরীক্ষার ফলাফল। আমি প্রমাণ করতে চেয়েছি—যদি মন থাকে, পরিকল্পনা থাকে, তাহলে কৃষিও লাভের পথ হতে পারে।”
উল্লাপাড়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সুর্বনা ইয়াসমিন সুমি বলেন, এবার উল্লাপাড়া উপজেলায় ২২ হেক্টর আখের চাষা আবাদ হয়েছে। গত অর্থ বছরে ২০ হেক্টর জমিতে আখের চাষ হয়েছিল। উল্লেখযোগ্য জাতের মধ্যে, ইশ্বরদী সিক্সটিন ঈশ্বরদী এইটিন রংবিলাস, ফিলিপাইন জাতের আখ রয়েছে । উল্লাপাড়া উপজেলাতে আখের চাষাবাদ রয়েছে রামকৃষ্ণপুর সলঙ্গা বোয়ালিয়া বিনায়েকপুর বাঙ্গালা ইউনিয়ন সহ আখের চাষাবাদ রয়েছে। আমরা যারা উপসহকারী থেকে শুরু করে আমাদের কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের কারিগরি সাহায্য সহযোগিতা করে আসছি ।
“আনোয়ার হোসেনের মতো উদ্যোক্তারা স্থানীয় কৃষিতে নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছেন।”স্বপ্ন এখন সবার
একসময় যাদের মনে সন্দেহ ছিল, তারাই এখন এসে বলেন, “আনোয়ার ভাই, আপনি আমাদের চোখ খুলে দিলেন।” আখক্ষেতের পাশে দাঁড়িয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমি চাই, আরও নতুন নতুন উদ্যোক্তা যেন এ পথে আসে। মাটি কিন্তু ফিরিয়ে দেয়, যদি তুমি তাকে সময় দাও, ভালোবাসো।” আসলে এটা শুধু আনোয়ার হোসেনের গল্প নয়—এটা হাজারো কৃষকের সম্ভাবনার গল্প। যাঁরা মাটিকে সঙ্গী করে স্বপ্ন বোনেন, জীবিকার পথে নতুন আলো খুঁজে নেন।