Saturday , 25 October 2025

দুবলার চরে শুরু হচ্ছে শুটকি মৌসুম, ধার-কর্জ, ঝড়-জ্বলোচ্ছাস ও দস্যতার শঙ্কা মাথায় নিয়েই সাগরে যেতে উপকূলের হাজার হাজার জেলের প্রস্তুতি সম্পন্ন

॥ মাসুদ রানা, বাগেরহাট জেলা  প্রতিনিধি ॥

ঙ্গোপসাগর পাড়ে সুন্দরবনের দুবলার চরে শুরু হচ্ছে শুটকি মৌসুম। এ মৌসুমকে ঘিরে মোংলার উপকূলের নদ-নদীতে জড়ো হয়েছে শতশত জেলে ট্রলার। বনবিভাগের কাছ থেকে পাস-পারমিট নিয়ে শনিবার মধ্যরাত থেকে সমুদ্রে যাত্রা করবেন এসব জেলেরা। এখন মোংলায় অবস্থা নিয়ে এসব জেলেরা তাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ট্রলার ভর্তি করছেন।

এ মৌসুমকে ঘিরে চরগুলোতে প্রায় ১০ হাজার জেলে-মহাজনের সমাগম ঘটবে। তারা চরে থাকার জন্য অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করবেন। নির্মাণ করবেন মাছ শুকানোর চাতাল ও ট্রলার থেকে মাছ ওঠানামানোর জন্য জেটি এবং ঘাট। এসব কাছে জেলেরা কোন ভাবেই সুন্দরবনের কোন প্রজাতির গাছপালা কাটতে ও ব্যবহার করতে পারবেন না। কেউ যদি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বনের ক্ষতিসাধনের অপচেষ্টা চালান তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, আগামী ২৬ অক্টোবর থেকে দুবলার চরে শুরু হচ্ছে শুটকি মৌসুম। শুটকি মৌসুম শেষ হবে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারী। এ মৌসুমের ৪ মাস ধরে তারা দুবলার আলোরকোল, অফিসকেল্লা, নারকেলবাড়ীয়া ও শেলার চরে অবস্থান করবেন। চরগুলোতে জেলেদের থাকার জন্য ৯শ ঘর বাঁধার অনুমতি দেয়া হয়েছে। আর দোকানের অনুমোদন দেয়া হয়েছে ৮০টি। এরমধ্যে রয়েছে মুদি, তেল, ওষুধ, সেলুন ও হোটেলসহ নানা পণ্যের দোকান।

এছাড়া মাছ বেচাকেনার জন্য ১০০টি ডিপোর অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ মৌসুমকে ঘিরে চরগুলোতে প্রায় ১০ হাজার জেলে-মহাজনের সমাগম ঘটবে। তারা চরে থাকার জন্য অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করবেন। নির্মাণ করবেন মাছ শুকানোর চাতাল ও ট্রলার থেকে মাছ ওঠানামানোর জন্য জেটি এবং ঘাট। এসব কাছে জেলেরা কোন ভাবেই সুন্দরবনের কোন প্রজাতির গাছপালা কাটতে ও ব্যবহার করতে পারবেন না। কেউ যদি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বনের ক্ষতিসাধনের অপচেষ্টা চালান তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ নিষেধাজ্ঞা মেনেই চরে ঘর তোলাসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণে জেলেরা প্রয়োজনীয় কাটপাট সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন।

খুলনার পাইকগাছার জেলে মহাজন রফিকুল ইসলাম বলেন, বনের গাছপালা কাটা ও ব্যবহার নিষেধ, তাই আমরা জাল ধরার জন্য কাঁকড়া, ঘর ও চাতাল নির্মাণের বাঁশ, বেড়া-চটকি সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি। আমরা বনের কোন ক্ষতি করবো না।

সাতক্ষীরার আশাশুনির জেলে মহাজন মোস্তফা সানা বলেন, একটি পরিপূর্ণ ট্রলার নিয়ে দুবলার চরে যেতে আমাদের ২০/২৫ লাখ টাকার প্রয়োজন হয়। আমরা জেলে, এতো টাকা তো আমাদের নেই। তাই ধার-কর্জ করে নৌকা, জাল, বসত ঘরের প্রয়োজনীয় মালামাল ও মানুষজন নিয়ে সাগরে যাচ্ছি। আবহাওয়া ভাল থাকলে ভাল মাছ পাবো, তা টাকা উঠবে, না হলে লোকসান দিয়ে ঘরে উঠতে হবে।

বাগেরহাটের রামপালে জেলে মহাজন কালাম শেখ বলেন, কয়েক বছর ধরে সাগরে জলদস্যু ছিলনা। এখন আবার জলদস্যুতা বেড়েছে। গত বছরও আমার জেলেদের জিম্মি করো পৌনে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়েছে । আমাদের ভয় শুধু ডাকাতের। আমরা চাই প্রশাসনে কঠোর নজরদারী। আমরা যেন শান্তিতে মাছ ধরতে পারি।

বাগেরহাটের মোংলার জেলে মহাজন কালাম ব্যাপারী ও লতিফ হাওলাদার বলেন, আমরা যে সময়টা ধরে দুবলার চরে থাকি, এই সময়টাই ঝড় জ্বলোচ্ছাসের সময়। ঝড় জ্বলোচ্ছাসের কারণে আমাদের মাছ ধরা ও শুকানোর কাজে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। ঝড়ে অনেক সময় ট্রলার ডুবে যায়। বৃষ্টিতে চরের মাছও পঁচে যায়। এতে আমাদের ভীষণ ক্ষতি হয়। তাই ঝড় জ্বলোচ্ছাসের সাথে যুদ্ধ করেই আমাদের বেঁচে থাকতে হয়।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, গত মৌসুমে শুটকি থেকে বনবিভাগের ৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছিল। আশা করছি এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৭ থেকে ৮ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে। তিনি আরো বলেন, জেলেদের নিরাপত্তায় বনবিভাগের পাশাপাশি সেখানে থাকছে কোস্ট গার্ডও।

Check Also

উল্লাপাড়ায় ইউনিয়ন শ্রমিকলীগ নেতা এখন জামায়াতের প্রচার সম্পাদক

॥ আরিফুল ইসলাম আরিফ, উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি ॥ সি রাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সহ …