॥ শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি ॥
জ্ঞা ত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত ৭ মাসের ব্যবধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) ৪টি মামলা হলেও সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ণ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন।মামলাগুলোতে স্ত্রী, সন্তান ও শ্যালককে আসামী করা হলেও তারাও রয়েছেন ধরাছোয়ার বাইরে। এ অবস্থায় অনিয়মিত অফিস করলেও পিআইও’র বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা না নেওয়ায় জনমনে নানা গুঞ্জণ ছড়িয়ে পড়েছে।

চলতি বছরের ১১ মার্চ পিআইও আবুল কালাম আজাদ, তার স্ত্রী মর্জিনা খাতুন ও ছেলে ফজলে রাব্বি রিয়নের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা করে দুদক। ওই মামলায় আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৩২ লাখ ৪৬ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জণ, স্ত্রী মর্জিনা খাতুন ১ কোটি ৫৬ লাখ ৮৩ হাজার ৪৮৩ টাকা ও ছেলে ফজলে রাব্বি রিয়নের নামে ১ কোটি ১৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯৪১ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জণ পূর্বক ভোগ দখলে রেখেছেন।
অভিযুক্ত পিআইও আবুল কালাম আজাদ পাবনার সুজানগর উপজেলার হাসামপুর গ্রামের শমসের আলী মিয়ার ছেলে এবং শ্যালক জামাল উদ্দিন ফকির একই উপজেলার হাকিমপুর নতুনপাড়ার আফতাব উদ্দিন ফকিরের ছেলে।
দুদক পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শহিদুল আলম সরকার বলেন, শাহজাদপুর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবুল কালাম আজাদ সরকারি চাকরির সুবাধে অবৈধ উপায়ে শুধু স্ত্রী-সন্তানের নামেই নয়, সম্পদ গড়েছেন শ্যালকের নামেও। উপার্জিত অর্থকে বৈধতা দিতে শ্যালকের নামে ১ কোটি ২৮ লাখ টাকায় দুটি গাড়ি কিনেছেন তিনি। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে এসব তথ্য পাওয়ায় ২৩ অক্টোবর দুদকের সহকারী পরিচালক সাধন চন্দ্র সূত্রধর বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। মামলায় পিআইও আবুল কালাম আজাদ ও তার শ্যালক জামাল উদ্দিন ফকিরকে আসামী করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়ে অভিযোগ ওঠায় প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর পিআইও’র বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করে দুদক। এরপর একই বছরের ৮ ডিসেম্বর ৩২ লাখ ৪৬ হাজার টাকা মূল্যের স্থাবর ও ১ কোটি ৩৩ লাখ ১১ হাজার ১৮২ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য প্রদান করেন তিনি। এতে প্রতীয়মান হয় যে, কমিশনে পিআইও’র দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ২৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন। যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এছাড়াও অনুসন্ধানকালে তার শ্যালক জামাল উদ্দিন ফকিরের নামে দুদক মোট ১ কোটি ৯১ লাখ ৮৬ হাজার ১৮২ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের তথ্য পায়। কিন্তু এ সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার নামে ঋণ ও দায় দেনার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। একই সময়ে তার পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় পাওয়া যায় ২৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এতে তার অর্জিত সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় দুই কোটি ১৯ লাখ ৮১ হাজার ১৮২ টাকা। তবে এ সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় এক কোটি ১০ লাখ ৭ হাজার টাকা। সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে প্রতীয়মান হয় যে, তিনি অসাধু উপায়ে ১ কোটি ৯ লাখ ৭৪ হাজার ১৮২ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জণপূর্বক ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
অপরদিকে, আসামি আবুল কালাম আজাদ অবৈধ আয় দ্বারা তার শ্যালক জামাল উদ্দিন ফকিরের নামে ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় একটি গাড়ি ও ৯৬ লাখ টাকার একটি জীপ গাড়ি ক্রয়ে সহযোগিতা করার প্রমান পেয়েছে। যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে দন্ডবিধি’র ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যে কারনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের ১১ মার্চ পিআইও আবুল কালাম আজাদ, তার স্ত্রী মর্জিনা খাতুন ও ছেলে ফজলে রাব্বি রিয়নের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা করে দুদক। ওই মামলায় আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৩২ লাখ ৪৬ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জণ, স্ত্রী মর্জিনা খাতুন ১ কোটি ৫৬ লাখ ৮৩ হাজার ৪৮৩ টাকা ও ছেলে ফজলে রাব্বি রিয়নের নামে ১ কোটি ১৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯৪১ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জণ পূর্বক ভোগ দখলে রেখেছেন। যা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারা এবং দন্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এ বিষয়ে শাহজাদপুরের পিআইও আবুল কালাম আজাদ রবিবার দুপুরে মোবাইলে বলেন, হয়রানী করার জন্য একই ধরনের অভিযোগে দুদক পরপর ৪টি মামলা করেছে। আমিও দেখবো, তারা আমার ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে কি করতে পারেন। অনিয়মিত অফিস করার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: কামরুজ্জামান বলেন, পিআইও আমার অধিনস্ত কর্মকর্তা না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারি না। আপনি জেলা ত্রাণ ও পূর্নবাসন অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। অনিয়মিত অফিস করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে জেলা ত্রান ও পূর্নবাসন কর্মকর্তা আব্দুল বাছেদ রবিবার বিকেলে বলেন, দুদকে মামলা হলেও বিষয়টি পিআইও’র ব্যক্তিগত। মামলায় চার্জসিটভুক্ত হলে তখন আমরা বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারবো। এর আগে আমাদের কিছু করার নেই। অনিয়মিত অফিস করার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
global sangbad 24 অনলাইন নিউজ পোর্টাল