বৃহস্পতিবার , ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
প্রতিকি ছবি সংগ্রীহিত

প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে সুন্দরবনে মাছের অভয়ারণ্য, আটক করেও উৎকোচের বিনিময় ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ

॥ মাসুদ রানা, বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি ॥

সুন্দরবনের অভয়ারন্য সহ বিভিন্ন খালে কাকড়া আহরণ ও বিষ দিয়ে চলছে মাছ শিকারের মহাউৎসব। যা গত ৩ মাস নিষিদ্ধে সময়ও চলছিল তা এখন চলছে পুরোদমে। এছাড়া মাছ ও অন্যান্য জলযপ্রানী বিচারনের জন্য বনের কয়েকটি এলাকা সরকার কর্তৃক অভয়ারন্য ঘোষনা করা হলে যাতে ১২ মাসই মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও সেখানে চুক্তিভিত্তিক ধরানো হচ্ছে মাছ ও কাকড়া।

 

বন বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তারাও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এখান থেকে জাল নৌকা সহ জেলেদের আটক করলেও মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে বনরক্ষীরা। বুধবার গভীর রাতে ১১টি নৌকা সহ প্রায় ৪০ জন জেলেকে আটক করে ছেড়ে দিয়েছে নন্দবালা ফরেষ্ট অফিস বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

সহায়তা করছে বন বিভাগ ও প্রভাবশালী দলের নেতাকর্মীরা। সুন্দরবনের নদী-খালে মাছ ধরার বেশী ঘটনা ঘটছে ৫ আগষ্ট দেশে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের ঘটার পর। তখন থেকেই এ সকল অভয়ান্যে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বনের কোকিল মনি, চড়াপুটিয়া, দোবেকি সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় মোংলা, শরনখোলা ও দাকোপের কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর সহায়তায় বনের বিভিন্ন খালে মাছ ও কাকড়া শিকার চলছে।

তাদের এ কাজে বন বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তারাও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এখান থেকে জাল নৌকা সহ জেলেদের আটক করলেও মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে বনরক্ষীরা। বুধবার গভীর রাতে ১১টি নৌকা সহ প্রায় ৪০ জন জেলেকে আটক করে ছেড়ে দিয়েছে নন্দবালা ফরেষ্ট অফিস বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে নৌকায় নিষিদ্ধ কিছু না থাকায় তাদের জড়িমানা করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানায় নন্দবালার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সামানুল কাদের। আর রেঞ্জ কর্মকর্তা কিছুই জানেন না।

স্থানীয় একাধিক জেলে সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে সুন্দরবনে বিভিন্ন খালে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অবৈধ কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেটের নেতারা বন বিভাগকে ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন তাদের অবৈধ ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছে। পুর্ব সুন্দরবনের চাদপাই রেঞ্জের জিউধারা ও ঢাংমারী স্টেশনের অসাধু বনরীদের প্রত্য ও পরোক্ষ সহযোগিতায় চলছে মৎস্য আহরণ। অভিযোগ রয়েছে, সিন্ডিকেটের বাইরে কোনো জেলে মাছ ধরতে সুন্দরবনে গেলে তাদের বন বিভাগের কর্মকর্তা ও পুলিশ দিয়ে মাছসহ ধরিয়ে দেয়া হয়। তবে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যারা মাছ ধরছে তারা নির্দিধায় মাছ ধরছে কোনো ঝুঁকি ছাড়াই।

বনের কোকিল মনি, চড়াপুটিয়া, আন্দার মানিক, নন্দবালা ও মরাপশুর সহ বেশ কয়েকটি অফিসের খালে এখন অসাধু জেলেরা প্রতিনিয়ত নিষিদ্ধ ঘন ফাঁসের ভেসালি জাল ও ভারতীয় রিফকর্ড নামক বিষ নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে মাছ শিকার করছে। বনের গহীন বড় বড় খালে কারেন্ট জাল দিয়ে শিকার করা হচ্ছে পাঙ্গাস, পাতারী, জাবা, লাক্কা ও চিংড়িসহ অন্য প্রজাতির মাছ।

অবৈধ জেলেরা তাদের আহরণকৃত মাছ গভীর রাতে উপজেলা শরনখোলা, দাকোপ, খুলনা ফিসারী ঘাট ও দ্বিগরাজ বিভিন্ন মৎস্য আড়তে তা বিক্রি করছে বলেও জানা গেছে। আর এ সিন্ডিগেটের মধ্যে প্রধানত রয়েছে বড় দাদন ব্যাবসায়ী পানখালীর মহসিন ও কাকড়া ব্যাবসায়ী সিন্ডিগেটের নেতা উলুবুনিয়ার লিটন গাজী বলে জানায় জেলেরা।

প্রতিকি ছবি।

বুধবার গভীর রাতে মাছ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে একটি ট্রলার সহ ১১টি নৌকা সহ ৪০ জন জেলে আটক করে চাদঁপাই রেঞ্জের নন্দবালা ফরেষ্ট অফিস। সেই ট্রলার ও নৌকা সহ জেলেদের ষ্টেশন বা রেঞ্জ অফিসে না দিয়ে সেখানে বসেই দেন দরবার চালায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ সামানুল কাদের ও রেঞ্জ অফিসের ইস্পিট বোট ড্রাইভার রাজা মিয়া।

মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময় রাতেই তাদের ছেড়ে দেয়া হয় বলে একাধিক সুত্রে জানা যায়। তবে মঙ্গলবার রাতে একটি ট্রলার সহ ৩ জেলেকে আটক করলে জেলেরা ছাড়া পেলেও ট্রলারটি এখনও অফিসে বাধা রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জয়মনি এলাকার একাধিক জেলে বলেন, আমরা সুন্দরবনের মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করি। বন্ধের সময় আমরা সারাবছর যা রোজগার করি তাতে ভালোভাবে সংসার চলেনা। কিন্তু এলাকার প্রভাবশালী দলের নামধারী কয়েকটি সিন্ডিকেটের জাঁতাকলে আমরা জেলেরা অভাব কাটিয়ে উঠতে পারি না।

বন বিভাগের সহায়তায় যারা প্রভাবশালী নেতা বলে গড়ে উঠছে, তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক ছাড়া আমরা এখন সুন্দরবনের মাছ-কাঁকড়া কিছুই ধরতে পারব না। বিভিন্ন মামলা-হামলার ভয়ে মুখ বুজে সহ্য করি কষ্ট হলেও। তাদের হাত অনেক লম্বা, তারা এখন সুন্দরবন সহ সকল জেলেকে নিয়ন্ত্রণ করছে।

বন বিভাগ সূত্র জানা যায়, পাস-পারমিট বন্ধকালীন তিন মাস অবৈধভাবে বনে ঢুকে কেউ যাতে মাছের বংশবিস্তারে তিসাধন করতে না পারে, সেদিকে সকল বন বিভাগকে সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া বর্তমানেও যাতে বনের নদী ও খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার করতে না পারে সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে এবং অভিযোগ পেলে তাদের আটক করে আইনের আওতায় এনে আদালতে সোপর্দ করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে বন বিভাগের নন্দবালা অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ সামানুল কাদেরের কাছে ফোন করা হলেও তিনি কিছু না বলে বোট ড্রাইবার রাজা মিয়ার সাথে যোগাযোগ করার কথা বলে ফোনটি কেটে দেয়। তার পরেও বার বার মোবাইল করা হলেও ফোনটি রিসিভ করেনী তিনি।

চাদঁপাই রেঞ্জে কর্মকর্তা রানা দেব জানায়, মঙ্গলবার রাতে ৩ জন জেলে সহ একটি ট্রলার আটক করা হয়েছিল কিন্ত কিছু না পওয়ার কারণে (সি ও আর) মাধ্যমে জড়িমানা করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তবে বুধবার ট্রলার, নৌকা বা জেলে আটকের ঘটনা জেনে পরে জানানো হবে বলে জানান তিন।

এছাড়া উৎকোচ নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, বর্তমানে পাস-পারমিট নিয়ে জেলেরা বনের প্রবেশ করছে, তবে দুবলা থেকে পাশ পারমিট করবে বলে ছেড়ে দেয়া হয় এব্যাপারে তাদের কাছ থেকে বারতি কোন টাকা নেয়া হয়নী। তবে অবৈধভাবে বনে ঢুকে যারা বিষ দিয়ে মাছ ও কাকড়া শিকার করবে, বা অভয়ারন্যে মাছ ধরবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানায় বনের এ কর্মকর্তা।

Check Also

জেলখানা থেকে পলাতক হত্যা মামলার আসামী গ্রেপ্তার 

॥ সাদ্দাম উদ্দিন (রাজ), নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি ॥ নরসিংদী জেলা কারগার থেকে পলাতক হত্যা মামলার …