Saturday , 23 November 2024
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী ট্রাফিক ম্যানেজার মোঃ সোহাগ

দুর্নীতি, অনিয়মে আপোস না করায় ষড়যন্ত্রমুলক’ মামলায় আসামি মোংলা বন্দরের কর্মকর্তা, ন্যায় বিচার পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন

॥ মাসুদ রানা, বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি ॥

ফিস রাজনীতির প্রতিহিংসার বলির শিকার হয়ে রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলার ফাঁদে পড়ে দ্বিক বিদ্বিক ছোটাছুটি আর অসহ্য মানুষিক যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী ট্রাফিক ম্যানেজার মোঃ সোহাগ। অভিযোগ উঠেছে, দুর্নীতি ও অনিয়মে সাড়া না দেওয়ায় বিগত আওয়ামী লীগ রেজিমের কর্মকর্তারা ছিল তার উপর রুষ্ট।

 

কর্তৃপক্ষের কাছে মোঃ সোহাগের ২০২১সালেবিরুদ্ধে অফিসিয়াল ফাইলে মুজিব শতবর্ষের বঙ্গবন্ধুর লোগো কাটাকাটির একটি অভিযোগ দায়ের হয়। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সোহাগের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। গঠিত তদন্ত কমিটি পরবর্তিতে তদন্ত শেষে অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে সোহাগকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন।

অফিসের ঘুষখোর সিন্ডিকেটের সাথে আপোস না করায় এ কর্মকর্তাকে কিভাবে ফাঁদে ফেলা যায় তা নিয়ে দুর্নীতিবাজ চক্রটি রীতিমতো ওৎ পেতে থাকতো। শেষমেশ কোন পন্থা না পেয়ে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাঁর উপর দেয়া হয় মুজিব শতবর্ষের অফিস ফাইলে বঙ্গবন্ধুর লোগো কাটাকাটি বিষয়ক অভিযোগ। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এ অভিযোগের বিষয়ে অফিসিয়াল তদন্তে সে নির্দোষ প্রমাণিত হলেও ষড়যন্ত্রকারীরা তাঁর বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের বাইরের লোক দিয়ে আদালতে মামলা করিয়েছেন। যে মামলায় তিনি জেলে খেটে বর্তমানে জামিনে বেরিয়ে সাসপেন্ড রয়েছেন।

জানা গেছে, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে ২০১২ সালে ট্রাফিক অফিসার পদে চাকরিতে যোগদান করেন মোঃ সোহাগ। এরপর তিনি সহকারী ট্রাফিক ম্যানেজার পদে পদোন্নতি পান। সর্বশেষ ২০২০সালে কর্তৃপক্ষ তাকে ডেপুটি ট্রাফিক ম্যানেজার পদে চলতি দায়িত্ব পালন করার নির্দেশ দেয়। এ সময়ে তাকে ডেপুটি ট্রাফিক ম্যানেজার পদে পদোন্নতি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছিল।

ভূক্তভোগী, বিভিন্ন সূত্র ও দাপ্তরিক কাগজপত্রে সূত্র মতে, মোঃ সোহাগের এ পদোন্নতির প্রক্রিয়াটিকে অফিসের দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট কোনমতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। তৎকালীন আওয়ামী রেজিমের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা চক্র সোহাগের বিরুদ্ধে নানা চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকেন। ডেপুটি ট্রাফিক ম্যানেজার পদে সোহাগের পদোন্নতি হলে ঘুষখোর কর্মকর্তা সিন্ডিকেটের স্বার্থে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে এ কারণে তাকে ফাঁদে ফেলার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে।

এক পর্যায়ে  কর্তৃপক্ষের কাছে মোঃ সোহাগের ২০২১সালেবিরুদ্ধে অফিসিয়াল ফাইলে মুজিব শতবর্ষের বঙ্গবন্ধুর লোগো কাটাকাটির একটি অভিযোগ দায়ের হয়। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সোহাগের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। গঠিত তদন্ত কমিটি পরবর্তিতে তদন্ত শেষে অভিযোগের সত্যতা না পেয়ে সোহাগকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন। এরপরও অফিসের দুর্নীতিবাজ চক্র থেমে থাকেনি। তারা বাইরের লোক দিয়ে কৌশলে সোহাগের বিরুদ্ধে একই অভিযোগে আদালতে একটি রাষ্ট্রদোহিতার ধারায় মামলা করান।

মোংলার পাশর্^বর্তি রামপাল উপজেলা তাঁতীলীগের সভাপতি নাজমুল হাসান শেখ ২০২২সালের ১সেপ্টেম্বর মুজিব শত বর্ষের লোগো কাটাকাটির বিষয়ে বাগেরহাট আদালতে মোঃ সোহাগ এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় সোহাগ জামিন নিতে গেলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠান।

পরে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে কারাগার থেকে বেরিয়ে তিনি ২০২৩সালের ৭সেপ্টেম্বর চাকরিতে যোগদান করেন। পরে ১৯সেপ্টেম্বর মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ কারাগারে থাকার কারণে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে জুনিয়র কর্মকর্তা কুদরত আলী শেখকে ডেপুটি ট্রাফিক ম্যানেজার পদে চলতি দায়িত্ব প্রদান করে। সেই থেকে মোঃ সোহাগ সাময়িক বরখাস্ত হয়ে রয়েছেন।

এদিকে মোঃ সোহাগের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার নেপথ্যে সম্প্রতি মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চাকরি থেকে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা ট্রাফিক পরিচালক মোস্তফা কামাল ও বর্তমান ডেপুটী ট্রাফিক ম্যানেজার (চলতি দায়িত্ব) কুদরত আলী শেখের ইন্ধন ও কারসাজি রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা ট্রাফিক পরিচালক মোস্তফা কামাল হচ্ছেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সদ্য অপসারিত মেয়র তালুকদার আঃ খালেকের নিকট আত্মীয়। আর এ কর্মকর্তার প্রধান সহযোগী হচ্ছে কুদরত আলী। দু’জনই আওয়ামী রিজমের শীর্ষ অবস্থায় থেকে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ট্রাফিকসহ অন্যান্য বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করেছেন।

মোঃ সোহাগের বিরুদ্ধে যিনি মামলার বাদী সেই রামপাল উপজেলা তাঁতীলীগের সভাপতি নাজমুল হাসান শেখও বর্তমান ডেপুটি ট্রাফিক ম্যানেজার কুদরত আলীর নিকট আত্মীয়। যদিও মোস্তফা কামাল ও কুদরত আলী উভয়ই সোহাগের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ ও মামলার বিষয়ে নিজেদের সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে অস্বীকার করেছেন।

সাময়িক বরখাস্তকৃত সহকারী ট্রাফিক ম্যানেজার মোঃ সোহাগের ভাষ্য, তিনি কোন রাজনীতি করেন না। সৎ থেকে চাকরি করেছেন। তার পরও ষড়যন্ত্র করে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে আদালতে মামলা দিয়ে হয়রানী করছে একটি মহল। তিনি প্রতিহিংসার শিকার। দোষ না করেও চাকরিতে সাসপেন্ড হয়ে অসহনীয় মানুষিক যন্ত্রনায় ভূগছেন। আর মামলা মোকাবেলা করতে হচ্ছে দ্বিক বিদ্বিক ছোটাছুটি। তিনি এসবের পরিত্রান চান। চান চাকরি তার পদোন্নতিসহ পুনর্বহাল।

এদিকে বন্দরের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন মহল ও স্থানীয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী রিজমের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সহকারী ট্রাফিক ম্যানেজার মোঃ সোহাগকে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। গত ২১আগস্ট সকালে স্থানীয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১১সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দল মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ’র চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করে ডিটিএম সোহাগকে পদোন্নতিসহ স্বপদে পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দেন। স্মারকলিপিতে মোঃ সোহাগের নামে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়েরের সাথে যুক্ত ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। #

Check Also

নানা আয়োজনে কবি হিমেল বরকতের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

॥ মাসুদ রানা, বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি ॥ অকাল প্রয়াত কবি, গবেষক, প্রাবন্ধিক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের …