Tuesday , 3 December 2024

মোংলা-খুলনা রুটে নতুন সিডিউল ও ট্রেন সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি

॥ মাসুদ রানা, মোংলা প্রতিনিধি ॥

যাত্রীবাহি ট্রেন চলাচল আর্শীবাদ হলেও সময়সূচি ও ট্রেন সংখ্যা নিয়ে যাত্রীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা। মোংলা সামুদ্রিক বন্দর প্রতিষ্ঠার ৭৩ বছর পর আনুষ্ঠানিকভাবে গত ১ জুন থেকে পুরাতন বগি এবং ইঞ্জিন দিয়েই শুরু হয়েছে মোংলা-খুলনা রুটে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল।

 

 

প্রথম অবস্থায় নতুন এই রুটে আগে থেকে চলাচলরত খুলনা-বেনাপোল রুটের একটি লোকাল ট্রেনকে মোংলা কমিউটার নামে নতুন নামকরন করে মোংলা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত চলাচলের মধ্যে দিয়ে যাত্রীবাহি এ ট্রেন চলাচলের সূচনা করা হয়েছে। তবে সোয়া ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ রেলপথে প্রথম অবস্থায় ট্রেন চলছে মাত্র একটি। এ অঞ্চলের মানুষের জন্য এ যাতায়াত ব্যবস্থা আশীর্বাদ হলেও মোংলা থেকে খুলনা ও বেনাপোলগামী ট্রেনের যে সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে তা নিয়ে সাধারণ যাত্রীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। মোংলা-খুলনা রুটে প্রথম অবস্থায় নতুন সিডিউল করে অন্তত ৪টি ট্রেন চালানোর দাবি জানিয়েছেন এ অঞ্চলের মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোংলা থেকে খুলনার উদ্দেশ্যে মানুষ মূলত: ব্যবসা, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং অফিসিয়াল কাজে যান। কিন্তু দুপুর ১ টায় ট্রেনের সময় হওয়ায় অনেকেই এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দুপুরের দিকে খুলনা থেকে মোংলায় এসে আবার খুলনা যাওয়ায় এ রুটে পর্যাপ্ত যাত্রী নাও উঠতে পারে।

আপ এবং ডাউন দুই পথেই পর্যাপ্ত যাত্রী না হলে এই ট্রেনটি লোকশান দিবে। দিনের পর দিন লোকসান দিয়ে এক পর্যায়ে ট্রেনটি বন্ধ হয়ে যাবার আশংকা রয়েছে। তাই যাত্রীদের সার্বিক সুবিধার কথা বিবেচনা করে ট্রেনের সিডিউল পরিবর্তন  করে মোংলা থেকে সকাল বেলা ছাড়া ও এ রুটে ট্রেন চলাচলের সংখ্যা বৃদ্ধির জোর দাবি জানিয়েছেন এই রুটের চলাচলকারিরা।

মোংলা পৌর শহরের জুয়েলারী ব্যবসায়ী তরুণ চন্দ্র জানান, অনুমোদনের দীর্ঘ ১০ বছর ধরে নির্মাণ কাজ শেষ করার পর অবশেষে চালু হয়েছে মোংলা-খুলনা রেললাইন।

চিকিৎসা, শিক্ষা, দাপ্তরিক এবং ব্যবসার কাজে আমাদের প্রতিনিয়ত খুলনা যেতে হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ট্রেনের সিডিউল নিয়ে। এ ছাড়া রুটে একটি মাত্র ট্রেন চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ ব্যবসায়ী এ রুটে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অন্তত ২ জোড়া ট্রেন চলাচলের দাবি জানান।

উম্মী আয়েশা ইতু নামে এক শিক্ষার্থী জানান, মোংলা-খুলনা ট্রেন চালু হওয়াতে আমরা খুবই খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা শিক্ষার্থীরা এই সেবাটি নিতে পারছি না। কারণ আমাদেরকে সকাল বেলায় খুলনায় পৌঁছাতে হয়।

আবার বিকেল বেলায় খুলনা থেকে মোংলায় ফিরতে হয়। কিন্তু ট্রেনের সিডিউল দুপুর বেলা হওয়াতে আমার মত অনেক শিক্ষার্থী এই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই ট্রেনের সংখ্যা ও সময়সূচী পরিবর্তন করা হলে রোগি থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, ছাত্রছাত্রী, সাধারণ মানুষের সমস্যা অনেকটাই লাঘব হবে।

আবুল হাসান নামে মোংলার এক রোগী জানান, প্রায়ই চিকিৎসার কাজ ও ডাক্তার দেখাতে তাকে মোংলা থেকে খুলনায় যেতে হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ডাক্তার দেখিয়ে খুলনা থেকে মোংলায় রওনা দিতে রাত ৮/৯টা বেজে যায়।

আর খুলনার অধিকাংশ ডাক্তার বিকেলের দিকে রোগী দেখেন। এ অবস্থায় রাত ৮/৯টা দিকে খুলনা থেকে মোংলায় ট্রেন ছাড়লে এ রুটে রোগীসহ সাধারণ মানুষের উপকার হবে।

মোংলা বন্দরে খুলনা থেকে এসে নিয়মিত অফিস করেন সাধন কুমার চক্রবর্তী নামের এক শিপিং ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, সকাল থেকে খুলনা থেকে মোংলায় ট্রেন ছাড়লে শিপিং ব্যবসায়ীসহ বন্দর কেন্দ্রিক সরকারী চাকুরেদের ভীষণ উপকার হয়।

মোংলা নাগরিক সমাজের আহবায়ক মোঃ নুর আলম শেখ বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি মোংলা-খুলনা রুটেবাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু হলেও এর সিডিউল ও সংখ্যা নিয়ে আমরা হতাশ ও ক্ষুদ্ব। এ রুটটি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ স্বল্প খরচে এ রুট দিয়ে ট্রেনে চলাচল করতে ইচ্ছুক। কিন্তু কর্তৃপক্ষ স্বল্প পরিসরে রেল চালাচ্ছে। এ অবস্থায় এ রুটে নতুন সিডিউলে অন্তত ৪টি যাত্রীবাহি ট্রেন চালানোর দাবি জানান তিনি।

মোংলা পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আঃ রহমান বলেন, মোংলা শুধু একটি বন্দরই নয়, সুন্দরবন কেন্দ্রিক একটি পর্যটন এরিয়াও। এখানে ইপিজেডও রয়েছে। রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ইপিজেডের কারণে এ অঞ্চলে মানুষের সমাগমও বাড়ছে। তাছাড়া এ এলাকার মানুষ চিকিৎসার জন্য প্রায়ই ভারতে আসা যাওয়া করে এবং ব্যবসা ও ডাক্তার দেখাতে খুলনা শহরে যায়। প্রতি বছর এখানে দেশ বিদেশ থেকে পর্যটকরা আসে সুন্দরবন দেখতে।

সার্বিক দিক বিবেচনা করে ট্রেনের সময়সূচি পরিবর্তন ও এ রুটে অন্তত ৪টি ট্রেন চালালে সাধারণ মানুষ ও যাত্রীরা উপকৃত হবেন।

মোংলা রেলস্টেশন মাস্টার এস এম মনির আহম্মেদ জানান, এই রুটে ট্রেন চালু হবার পর মোংলা থেকে প্রতিদিন গড়ে দুই শো থেকে আড়াই শো যাত্রী যাতায়াত করছে। যাত্রীদের সুবিধা-অসুবিধার কথা চিন্তা করে ট্রেনের সময়সূচির ব্যাপারে আমাদের উর্ধতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। বিষয়টি তারা বিবেচনা করবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন।

এ রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলার সঙ্গে দেশের রেলওয়ের বর্তমান নেটওয়ার্ক সংযোগ স্থাপন এবং মোংলা বন্দরের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর রেলযোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করা,

মোংলা পোর্ট পর্যন্ত রেলপথে আরামদায়ক ভ্রমণের সুব্যবস্থা করা, রেলের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজস্ব আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে খুলনা-মোংলা পোর্ট রেলপথ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে।

রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালকুদার বলেন, আপাতত ‘বেতনা কমিউটার’ ট্রেনটি বেনাপোল থেকে মোংলা কমিউটার ট্রেন হয়ে বেনাপোল-মোংলা রুটে চলাচল করবে। পরবর্তীতে আরেকটি রেক দিয়ে এই রুটে ট্রেন চলাচলের পরিকল্পনা রয়েছে।

Check Also

মোংলা বন্দরের প্রভাবশালী সিবিএ’র সাবেক নেতা ফিরোজের চাকুরি শৃংখলা পরিপন্থির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ ১ মাসেও কার্যকরী হয়নি, নানা প্রশ্ন ও রহস্য

॥  নিজস্ব প্রতিবেদক, মোংলা ॥ মোংলা বন্দরের দোর্দন্ড প্রভাবশালী সিবিএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কর্তৃপক্ষের …