Tuesday , 29 April 2025

রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়েও অনিশ্চয়তার মুখে মোংলা বন্দর থেকে রেলযোগে পণ্য পরিবহন !

॥ মাসুদ রানা, বাগেরহাট  জেলা প্রতিনিধি ॥

প্র তিষ্ঠান  দীর্ঘ ৭৪ বছর পর মোংলা বন্দরকে রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত করা হলেও এখনও এই বন্দর থেকে শুরু হয়নি পণ্য পরিবহন। এর মধ্যে আবার বাংলাদেশে চলমান সব রেল প্রকল্প স্থগিত ঘোষনা করছে ভারত। সে প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম ছিল খুলনা-মোংলা রেলপথ। এ অবস্থায় চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ল মোংলা বন্দর থেকে রেলযোগে পণ্য পরিবহন।

 

সেময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এই প্রকল্পটি চালু হওয়ায় মোংলা বন্দরের সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগ স্থাপন ছাড়াও ভারত, নেপাল ও ভূটানসহ বিভিন্ন দেশে পণ্য পরিবহন সহজ হবে। গতিশীল বাড়বে মোংলা বন্দরের। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই রুটে পণ্যবাহী ট্রেন চালু হয়নি।

দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য নেয়া বিগত সরকারের অন্যতম মেগা প্রকল্প খুলনা-মোংলা রেলপথ। ভারত সরকার এই প্রকল্পে ব্যয় করে তিন হাজার তিন’শ কোটি রুপি। তখন এই রুটের মাধ্যমে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র মোংলার কার্যকরীতা বাড়ানোর কথা ছিল। একই সাথে মোংলা বন্দরের একটি টার্মিনাল পরিচালনারও সুযোগ পায় দেশটি। এ জন্য ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তৎকালীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এই রেলপথ উদ্ধোধন করেন।

এর সাত মাস পর বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে ২০২৪ সালের ১ জুন তৎকালীন আওয়ামী সরকার এই প্রকল্পে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন চালু করে। সেময় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এই প্রকল্পটি চালু হওয়ায় মোংলা বন্দরের সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগ স্থাপন ছাড়াও ভারত, নেপাল ও ভূটানসহ বিভিন্ন দেশে পণ্য পরিবহন সহজ হবে। গতিশীল বাড়বে মোংলা বন্দরের। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই রুটে পণ্যবাহী ট্রেন চালু হয়নি।

মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশি চার হাজার ২৬১ কোটি টাকায় এই প্রকল্পে খুলনা-মোংলা রুটে চলে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন। কিন্তু উদ্দেশ্য ছিল মোংলা বন্দরের সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগ স্থাপনের পাশপাশি বিভিন্ন দেশের সাথেও পণ্য পরিবহন সুগম করা। কিন্তু সেটি না হওয়ায় এই প্রকল্প এখন ব্যর্থ ও হাস্যকরে পরিনত হয়েছে।
মোংলা বন্দর বার্থ অ্যান্ড শিপ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ জাহিদ হোসেন বলেন, পণ্য পরিবহণের ট্রেন চালু না হওয়াতে বন্দর সংশ্লিষ্টরা ব্যবসায়ীরা আদৌ কোন সুফল পাচ্ছেনা। ব্যবসায়ীদের সুফল পেতে হলে মোংলা বন্দর থেকে সরাসরি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এবং আর্ন্তজাতিকভাবে পণ্য পরিবনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

 

বন্দর ব্যবহারকারী মাহবুবর রহমান মানিক বলেন, দীর্ঘ ৭৪ বছর পর মোংলা বন্দর রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ায় ব্যবসায়ীরা সত্যিকার অর্থে অনেক খুশি হয়েছিল এবং এটি দরকার ছিল। কারণ মোংলা বন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দ্রুত সময়ে কম খরচে পণ্য ডেলিভারি করা যেতো। কিন্তু উদ্ধোধনের এক বছর সাত মাস পরও এই বন্দর থেকে রেলযোগে পণ্য পরিবহন সুবিধা চালু হয়নি। এটি খুব দুঃখজনক। সরকারের কাছে দাবি থাকবে এই রুটটি চালু করার। তাহলে এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা অনেক উপকৃত হবে। একই সাথে এই বন্দর আরও গতিশীল হবে।

মোংলা বন্দর দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হলে দ্রুত কম খরচে মালামাল নিতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। এ কথা স্বীকার করে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, এ জন্য বন্দর জেটির ভেতরে রেল সংযোগ স্থাপনও করা হয়েছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) মোঃ কামাল হোসেন বলেন, মোংলা বন্দর থেকে এই রেলপথ দ্রুত চালু করতে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। কারন মোংলা বন্দর দিয়ে রেল লাইন সম্প্রসারিত হওয়ায় তারা পুরোপুরি প্রস্তত রয়েছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ে প্রতিমাসে মিটিংয়ে বন্দরে রেল লাইন প্রস্তত রয়েছে উল্লেখ করে তারা একটি রিপোর্ট দেন। এখন সরকারের নীতি নির্ধারকরা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট আমদানি-রপ্তানীকারকরা খুশি হবেন।

জানা গেছে, খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর। এরপর একই সালে জাতীয় অর্থিৈনতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন পাওয়ার পর ২০১৬ সালে এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করে ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ‘ইরকন ইন্টারন্যাশনাল’। ওই প্রকল্পের ৯১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ ছাড়াও খুলনার রূপসা সেতুর ওপর পাঁচ দশমিক ১৩ কিলোমিটার একটি রেলসেতু করা হয়। একই সাথে প্রকল্পের আওতায় ১০৭টি ছোট ব্রিজ, ৯টি আন্ডারপাস, ১১টি ষ্টেশন নিমাণ করা হয়।

উল্লেখ্য ১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মোংলা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার ৭৪ বছর পর গত ২০২৩ সালে মোংলা বন্দর এই রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়। তবে যে উদ্দেশ্যে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় সম্ভাবনাময় এই বন্দরকে যুক্ত করা হয়েছিল তা এখনও বাস্তবায়িত না হওয়ায় বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়েছেন।

Check Also

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারকৃত মোংলার শ্রমিকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয়ে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য 

॥ মাসুদ রানা, বাগেরহাট  জেলা প্রতিনিধি ॥ মোং লা বন্দর শ্রমিক কর্মচারী সংঘ রেজি নং-২১৪৩ …