Saturday , 1 November 2025

একের পর এক নিষেধাজ্ঞায় দিশেহারা মোংলা সহ উপকূলের জেলেরা সংসার চালাতে হিমশিম

॥ মাসুদ রানা, বাগেরহাট জেলা  প্রতিনিধি ॥

কটির পর একটি নিষেধাজ্ঞায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন উপকূলীয় অঞ্চলের হাজারো জেলে। সাগর, নদী ও সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে প্রায় সারা বছর ধরেই কোনো না কোনোভাবে জারি থাকে মাছ ধরার ওপর অবরোধ। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এসব জেলেরা।

স্থানীয় জেলে জাহিদ ব্যাপারী, চয়ন বিশ্বাস ও সিরাজ শিকদার বলেন,“আমাদের পূর্বপুরুষরা এই নদীতে নৌকা বেয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। আমরাও তাই করি। কিন্তু এখন নদীতে আগের মতো মাছ নেই। নিষেধাজ্ঞার সময় যে চাল পাই, তা দিয়ে সংসার চলে না। বাচ্চাদের খাওয়াতেও কষ্ট হয়।”

জেলেদের অভিযোগ, বছরের অর্ধেকেরও বেশি সময় মাছ ধরা বন্ধ থাকায় আয়ের উৎস শূন্য হয়ে যায় তাদের। নৌকা-জাল বিক্রি করে, ধার-দেনা করে কিংবা অন্যের জমিতে শ্রম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেকেই।

মোংলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম জানান,প্রতি বছর জানুয়ারিতে ১৫ দিন এবং ফেব্রুয়ারিতে আরও ১৫ দিন চালানো হয় বিশেষ কম্বিং অপারেশন। এসময় অবৈধ জাল ধরতে অভিযান চলে, তবে জেলেরা কোনো সহায়তা পান না।

প্রতি বছর ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিন সমুদ্রে সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে। এ সময়টি মাছের প্রজনন মৌসুম হওয়ায় জেলেদের জাল ফেলা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম আরও জানান,“মৎস্য অধিদপ্তরের ঘোষিত নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের চাল সহায়তা দেওয়া হয়। তবে বনবিভাগের নিষেধাজ্ঞার সময় তারা কোনো সহায়তা পান না। আশা করা হচ্ছে, আগামী বছর থেকে বনবিভাগ থেকেও কিছু সহায়তা দেওয়া হবে।”

অক্টোবর মাসেও ২২ দিনের জন্য সাগর ও নদীতে অবরোধ থাকে মা ইলিশ সংরক্ষণে। এ সময় সাগর ও নদীতে সব ধরনের জাল ফেলা ও মাছ আহরণ বন্ধ থাকে। আবার প্রতি বছর ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ঝাটকা ইলিশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে নদীতে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে।

নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে নিবন্ধিত জেলেরা দুই দফায় সরকারি সহায়তা হিসেবে চাল পান—প্রথম দফায় ৮০ কেজি ও দ্বিতীয় দফায় আরও ৮০ কেজি। কিন্তু এতে পরিবারের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না বলে জানান জেলেরা।

স্থানীয় জেলে জাহিদ ব্যাপারী, চয়ন বিশ্বাস ও সিরাজ শিকদার বলেন,“আমাদের পূর্বপুরুষরা এই নদীতে নৌকা বেয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। আমরাও তাই করি। কিন্তু এখন নদীতে আগের মতো মাছ নেই। নিষেধাজ্ঞার সময় যে চাল পাই, তা দিয়ে সংসার চলে না। বাচ্চাদের খাওয়াতেও কষ্ট হয়।”

জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির মোংলা শাখার সভাপতি বিদ্যুৎ মণ্ডল বলেন,“মোংলায় প্রায় ৩০ হাজার জেলে রয়েছে। এর মধ্যে নিবন্ধিত মাত্র ৬ হাজারের কিছু বেশি। অথচ যোগ্য জেলেই রয়েছে অন্তত ১৫ হাজার। বাকিরা আবেদন করেও কার্ড পাচ্ছে না।” উপকূলজুড়ে দীর্ঘ সময়ের এসব নিষেধাজ্ঞা ও সহায়তার সীমাবদ্ধতায় দিন দিন ভেঙে পড়ছে জেলেদের জীবনধারা। জীবিকার পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই পেশা পরিবর্তনের কথা ভাবছেন। তবে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও সাগরে ফেরার আকাঙ্ক্ষা এখনো জেলেদের বুকের ভেতর জ্বলে আছে।

Check Also

জমি নিয়ে বিরোধের জেরে চাচা হাতে ভাতিজা খুন

॥ সাদ্দাম উদ্দিন (রাজ), নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি ॥ ন রসিংদীর রায়পুরায় জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে চাচার …