॥ ইব্রাহিম খলিল, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ॥
সা তক্ষীরার এক সময়ের প্রাণ, শহরের জীবন ও পরিবেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ প্রাণসায়ের খালকে রক্ষা করতে বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) পাকাপোল সংলগ্ন খাল পাড়ে আয়োজন করা হয় মানববন্ধন ও মুভমেন্ট কর্মসূচি। স্থানীয় নাগরিক সমাজ, যুব সংগঠন, গণমাধ্যম কর্মী এবং পরিবেশকর্মীরা অংশ নিয়ে খালের পুনরুদ্ধার ও সুপেয় পানির অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানান।বক্তারা খালের পুনরুদ্ধার, পরিচ্ছন্নতা অভিযান, বৃক্ষরোপণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, কসাইখানা ও দূষণকারী প্রতিষ্ঠান স্থানান্তর এবং সংযোগ খাল মুক্ত করার আহ্বান জানান। এছাড়া শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, আশাশুনি ও তালা উপজেলায় সুপেয় পানির সংকট সমাধানে প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করার দাবি করেন। মানববন্ধন শেষে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আজাদ হোসেন বেলাল সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে মানবজমিনের এসএম বিপ্লব হোসেন সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রথম আলোর স্টাফ রিপোর্টার কল্যান ব্যানার্জী, কবি পল্টু বাসার, প্রাণসায়ের ও পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চ ও দেশ টিভির সাতক্ষীরা প্রতিনিধি শরিফুল্লাহ কায়সার সুমন, চ্যানেল ২৪-এর আমেনা বিলকিস ময়না, সাতক্ষীরা পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর শফিক-উদ-দৌলা সাগর, নদী বন ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, টিআইবি সাতক্ষীরার কোঅর্ডিনেটর আল আমিন, ডিবিসি টেলিভিশনের বেলাল হুসাইন, ইয়ুথ এ্যালায়েন্স সাতক্ষীরার সহ-সভাপতি হোসেন আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল।
ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ (ভিবিডি) সাতক্ষীরা, সিডো সংস্থার গঠিত ইয়ুথ এ্যালায়েন্স, জেলা নাগরিক কমিটি, প্রথম আলো বন্ধুসভা, উত্তরণ, স্বদেশ, বারসিক, এক্টিভিস্টা সাতক্ষীরা, সাতক্ষীরা সাইবার ক্রাইম এ্যালার্ট টিম, প্রাণসায়ের ও পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চ, নদী বন ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি, বিডি ক্লিন, ক্রিসেন্ট, ল স্টুডেন্ট ফোরাম, টিআইবি, গ্রীণম্যান, জনকল্যান সংস্থা ও শরুব ইয়ূথ টিমসহ একাধিক সংগঠন এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।
বক্তারা বলেন, প্রাণসায়ের খাল শুধু একটি খাল নয়, এটি সাতক্ষীরার অস্তিত্ব। খালের বুক চিরে কসাইখানা চালু করার সিদ্ধান্ত জনগণের সাথে তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের নীরবতার কারণে দখলদাররা খাল গিলে খাচ্ছে। জনগণ এবার জেগে উঠেছে, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। খাল না থাকলে সাতক্ষীরার পরিবেশ টিকবে কীভাবে? আগামী প্রজন্মের জন্য আমাদের এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।”
বক্তারা খালের ঐতিহাসিক গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, একসময় খালটি মরিচ্চাপ নদী থেকে নৌখালি খাল বা বেতনা নদীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করত। এটি শহর ও আশপাশের গ্রামীণ অঞ্চলে নৌযান চলাচল, সেচ এবং বাণিজ্যের প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। খালটির মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং স্থানীয় অর্থনীতি সচল রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
তবে আজ খালটি দখল, আবর্জনা ফেলা, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও বাজারের বর্জ্য ফেলার কারণে মারাত্মকভাবে দূষিত ও অচল। খালের তলদেশ ভরাট হওয়ার কারণে পানি প্রবাহ কমে গেছে। সংযোগ খালগুলো সুইচ গেটের কারণে জোয়ার-ভাটা বন্ধ থাকায় খালটি মৃতপ্রায় অবস্থায় রয়েছে। এর ফলে শহরের জলাবদ্ধতা, দুর্গন্ধ, মশা-বাহিত রোগসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
বক্তারা খালের পুনরুদ্ধার, পরিচ্ছন্নতা অভিযান, বৃক্ষরোপণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, কসাইখানা ও দূষণকারী প্রতিষ্ঠান স্থানান্তর এবং সংযোগ খাল মুক্ত করার আহ্বান জানান। এছাড়া শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, আশাশুনি ও তালা উপজেলায় সুপেয় পানির সংকট সমাধানে প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করার দাবি করেন। মানববন্ধন শেষে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।