Saturday , 1 November 2025

শাহজাদপুরে যমুনার ভাঙ্গণে বিলিনের পথে কুরসি-ধীতপুর হাট-বাজার, ফসলি জমি হারিয়ে কৃষকেরা দিশেহারা

॥ শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি ॥

সি রাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার ২টি ইউনিয়নের ৯টি গ্রামে যমুনা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে। গ্রামগুলি হল, সোনাতনী ইউনিয়নের মাকড়া, ধীতপুর, শ্রীপুর, কুড়সি, বারপাখিয়া, লোহিন্দাকান্দি, গালা ইউনিয়নের বৃ-হাতকোড়া ও মোহনপুর গ্রাম।

 

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত ৫/৬ বছরে এ ২টি ইউনিয়নের গ্রামগুলিতে কমপক্ষে ২৭০ হেক্টোর ফসলি জমি যমুনা নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে।

বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে এ পর্যন্ত এই ভয়াবহ ভাঙ্গণের তান্ডবে এ সব গ্রামের অধিকাংশ ফসলি জমি, ৫ শতাধিক বাড়িঘর, ২টি মসজিদ, ২টি মাদ্রাসা ও ১টি কবরস্থান নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এখনও ভাঙ্গণ অব্যাহত থাকায় অবশিষ্ট টুকুও বিলিনের পথে। এছাড়া ধীতপুর-কুরসি গ্রামের ২টি হাট-বাজারের অর্ধেক অংশ নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এখানে দ্রুত জিওটেক্স বালুর বস্তা ফেলা না হলে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তা যমুনা গর্ভে বিলিন হয়ে যাবে। গত ১ মাস আগেও এ সব গ্রামে বাড়িঘর ছিল, এখন সেখানে অথৈ পানি আর পানি। এখানকার জমিতে প্রচুর পরিমানে পটল, বেগুন, ধান, বাদাম, মাষকালাই, বাঙ্গী, সব্জি, ধনিয়া সহ সব ধরণের ফসল আবাদ হয়ে থাকে। এছাড়া এখানকার কৃষকেরা ষাড় গরু, ছাগল, ভেড়া,হাঁস, মুরগী ও কবুতর লালন পালন করে বাড়তি আয় করে।

ফলে যমুনা নদী বেষ্টিত সোনাতনী ইউনিয়নের মানুষ আগের চেয়ে অনেক স্বচ্ছল হয়ে উঠেছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এখানে নতুন করে যমুনার ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে। ফলে এ এলাকার অধিকাংশ ফসলি জমি ও বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। ফলে এখানকার কৃষকেরা নতুন করে ভাঙ্গণের কবলে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে ধীতপুর গ্রামের সাত্তার প্রামানিক, আসমা খাতুন, চম্পা বেগম বলেন, এই চরে প্রচুর পরিমানে পটল, বেগুন, ধান, বাদাম, মাষকালাই, বাঙ্গী, সব্জি, ধনিয়া সহ সব ধরণের ফসল চাষ হয়ে থাকে। ৮৮ সাল থেকে এখানে ভাঙ্গা শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ১০/১১ ভাঙ্গা দিছি। পটল সহ নানা ফসল আবাদ কওে সংসার ভালোই চলছিলাম। এখন বাড়িঘর ও ফসলি জমি সবকিছু নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়ায় আমরা এখন অন্যের জমিতে ঘর তুলে থাকি। এ ঘরটিও ভাঙ্গণের কবলে পড়েছে। এ ভিটা ভেঙ্গে গেলে কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেবো, কি খাবো তা নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় পড়েছি।

এ বিষয়ে ওই গ্রামের কমেলা খাতুন, বাতেন বেপারি, রাজ্জাক সরদার আব্দুস সামাদ ও মনোয়ারা বেগম জানান, এ পর্যন্ত ১২/১৪ বার বাড়িঘর ও ফসলি জমি যমুনা নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। আবারও ভাঙ্গণের কবলে পড়েছেন তারা। এখন তাদের রাত কাটে ভাঙ্গণ আতংকে।

এ বিষয়ে রজিনা খাতুন বালি বলেন, সোনাতনীর বালুমাটি সোনার মতই ছিল, এই বালু মাটিতে যা বুনেছি তাই ভালো জন্মেছে। শাকসব্জি, তরুতরকারি শজপাতি বুনে আমাদের সংসার ভালোই চলছিল। এখন ভাঙ্গণের কবলে পড়ে সবকিছু নদীতে চলে যাচ্ছে। ফলে আমরা সবকিছু হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। এখন আমরা কোথায় যাবো, কি খাবো তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি।

এ বিষয়ে সোনাতনী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শামছুল হক বলেন, গত এক বছরে সোনাতনী ইউনিয়নের শ্রীপুর থেকে বারোপাখিয়া পর্যন্ত ৫/৬টি গ্রামের প্রায় ৪/৫‘শ বাড়িঘর, ২টি মসজিদ, ২টি মাদ্রাসা ও ১টি কবরস্থান যমুনা নদীতে চলে গেছে। এই ভাঙ্গণরোধে এখানে দ্রুত বাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

এ বিষয়ে ফজর আলী ব্যাপারী বলেন, ভাংতে ভাংতে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। চ্যাংরা থেকে বুড়া হয়ে গেলাম তবুও ভাঙ্গণরোধে কোনো সরকারই ব্যবস্থা নিল না। তিনি বলেন, বিগত সরকার আমলে স্থানীয় এমপির কাছে ভাঙ্গণরোধে ব্যবস্থা নিতে দরখাস্ত দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা তো এখন নাই। বিদায় নিয়েছে। এ সরকার যদি ব্যবস্থা নেয় তাহলে আমরা বাঁচবো। না হলে এ ভাবেই আস্তে আস্তে সবকিছু শেষ হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে কুরসি-ধীতপুর বাজারের সার ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের ও হাফিজুর রহমান বলেন, যমুনা নদীর ভাঙ্গণে কুরসি গরুর হাট, মসজিদ, মাদ্রাসা, বাড়িঘর ফসলি জমি সবকিছু বিলিন হয়ে যাচ্ছে। এই ভাঙ্গণ ঠেকাতে না পাড়লে মানুষজন অসহায় হয়ে পবে। ভাঙ্গণরোধে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এ ইউনিয়নটি সম্পূর্ণ বিলিন হয়ে যাবে। তাই সরকারের কাছে দাবী দ্রুত ভাঙ্গণরোধে ব্যবস্থা নিন।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত ৫/৬ বছরে এ ২টি ইউনিয়নের গ্রামগুলিতে কমপক্ষে ২৭০ হেক্টোর ফসলি জমি যমুনা নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। গব কয়েক মাসের ভাঙ্গণে ৭০ থেকে ১০০ হেক্টোর আবাদি জমি নদীতে চলে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর বিপরিত পাশে ৮০/৯০ হেক্টোর বালুর চর জেগে উঠেছে।

কিন্তু তা এখনও আবাদ যোগ্য হয়ে ওঠেনি। আবাদ যোগ্য হতে আরও কয়েক বছর সময় লাগবে। ফলে এ সব জমি এলাকাবাসির এখন কোনো কাজেই আসছে না। এদিকে যমুনার ভাঙ্গণের তান্ডবে এ ইউনিয়নের জমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় মানুষ জন অসহায় হয়ে পড়েছে। যে সব ফসলি জমি ভেঙ্গে গেছে, সে সব জমির মালিক তাৎক্ষণিক ভাবে চরম ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন। কৃষি বিভাগ থেকে তাদের প্রনদোনা দিয়ে এ ক্ষতি কিছুটা লাঘবে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: কামরুজ্জামান বলেন, ইতোমধ্যেই করিসী-ধীতপুরের ভাঙ্গণ এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরুপণ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অপরদিকে এ ভাঙ্গণরোধে ব্যবস্থা নিতে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলেছি। তারা ভাঙ্গণ এলাকায় দ্রুত বস্তা ফেলার ব্যবস্থা করবেন বলে জানিয়েছেন।

Check Also

“সাম্য ও সমতায় দেশ গড়বে সমবায়” এই প্রতিবাদ্যকে সামনে রেখে বেলকুচিতে পালিত হল ৫৪ তম জাতীয় সমবায় দিবস।

॥ আশিকুর রহমান, বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি ॥ শ নিবার সকাল ১১ টায় বেলকুচি উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে …