Thursday , 7 August 2025

নোয়াখালীতে নিরাপত্তা বেষ্টনী না রেখে লন্ডন টাওয়ার নির্মাণ ঝুকি ও আতংকে এলাকাবাসী

॥ এ আর আজাদ সোহেল, নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি ॥

নো য়াখালী পৌরসভা সোনাপুর গ্রামে শাহাদাত হোসেন নামে লন্ডন প্রবাসী নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে লন্ডন টাওয়ার নামে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়া খামখেয়ালী পনায় নির্মাণ কাজ চলছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা ।

 

পার্শ্ববর্তী রহুল আমিন হাউজিংয়ের ২৫-৩০ টি পরিবার এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। বিল্ডিংটি রাস্তা সংলগ্ন হওয়ায় মানুষের চলাচলে অনেক ঝুঁকি রয়েছে।

যাতে করে নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের ইট,কাঠ,সিমেন্ট পড়ে স্থানীয় এলাকাবাসী বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে হতাহতের মত ঘটনা সহ প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে বলে আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী। প্রতিবাদ করলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চাঁদাবাজির মামলা, হামলার অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা । ইমারত নির্মাণ বিধিমালয় নির্মাণ শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত। চারপাশে দুর্ঘটনা রোধে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখার নিয়ম থাকলেও এখানে তা মানা হচ্ছে না।

ঘটনাটি ঘটেছে, নোয়াখালী পৌরসভাধীন সোনাপুর গ্রামে ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা সংলগ্ন লন্ডন টাওয়ারের পার্শ্ববর্তী স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে।

সরেজমিনে গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সুবর্ণচর উপজেলার চরক্লার চৌরাস্তা বাজারের বাসিন্দা লন্ডন প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার শাহাদাত হোসেন গত.২০২৩ সাল থেকে সোনাপুর গ্রামে ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা সংলগ্ন বহুতল ভবন(১০ তলা) নির্মাণ কাজ শুরু করেন। যার কাজ বর্তমানেও চলমান আছে। তারা অভিযোগ করেন ভবন নির্মাণ কাজ শুরুর পর থেকে কোন প্রকার সুরক্ষা ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যাতে করে নির্মাণ কাজ করার সময় ইট, সিমেন্ট, সেন্টারিং এর মালামাল কাঠ- বাঁশ ইত্যাদি ঘরের চালের উপর পড়ে আশপাশের বিভিন্ন টিনশটের ঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে ভবনের মালিকের কাছে জানিয়েও কোন প্রতিকার পাননি তারা।

বরং তৎকালীন রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব খাটিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের চাঁদাবাজির মামলা সহ জানমালের ক্ষয়ক্ষতির হুমকি-ধমকি প্রদান করেন ভবন মালিক শাহাদাতের লোকজন। স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর ৫ আগস্ট এর পরে কাজ কিছুদিন বন্ধ থাকলেও তিনি পুনরায় আবার নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এখন আবার ভবনের মালিক কতিপয় বর্তমান রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সাথে আঁতাত করে তাদের প্রভাব খাটিয়ে বাসিন্দাদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন বলে তারা অভিযোগ করেন। তারা বলেন ভবনের ছাদ থেকে বিভিন্ন সময় ইট পাটকেল নিচে পড়ে। যা পৌরসভার পাকা চলাচলের রাস্তা ও বাড়ি ঘরের উপর পড়ে। ইতোমধ্যে ছাদ থেকে মালামাল পড়ে শিশুসহ কয়েকজন আহত হয়েছে।

এতে করে যেকোনো সময় কোমলমতি স্কুল শিক্ষার্থী , মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, মসজিদের মুসল্লী এমনকি পার্শ্ববর্তী জনসাধারণের প্রাণহানির হুমকি রয়েছে। কিন্তু ভবনেরর মালিক কোন সুরক্ষা বেষ্টনী তৈরি না করে নির্মাণ কাজ চলমান রেখেছেন। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী আকবর হোসেন জানান, ভবনের সেটু ফাইটিং করার সময় তার পানির রিজার্ভ টাংকি ফেটে যায়। বাসার ভিমপিলার ভেঙে গেছে, তার ছাদ ঘরের টিন ফেটে গেছে। দেয়াল ফেটে গেছে। একবার ছয় তলা থেকে পুরো দেয়াল তার ঘরের উপর ধসে পড়ে পুরো ঘর লন্ডভন্ড অবস্থা। অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেন্টারিং এর বিভিন্ন মালামাল ভবনের ছাদ থেকে তার উঠানে পড়ে এতে করে পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশে আশঙ্কা রয়েছে।

আরেক বাসিন্দা রাজ্জাক হোসেন জানান, ভবনের ছাদ থেকে ইট পড়ে সিমেন্ট পড়ে তার টিন অনেক নষ্ট হয়ে গেছে। চাল মেরামত করতে অনেক টাকা লেগেছে। কিন্তু কোন প্রতিকার পাননি। উল্টো তাকে হুমকি-ধমকি শুনতে হয়েছে। তার চলাচলের রাস্তার উপর ইট পাটকেল পড়ে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনিও আতঙ্কিত।

জাহিদুল আলম বাপ্পি জানান, একবার ছাদ থেকে ইট পড়ে তিনি ডান পায়ে রক্তাক্ত জখম হন। মালামাল ইট, সিমেন্ট পড়ে তারও টিনের চাল নষ্ট হয়ে যায়। ভবনের মালিক মেরামত করে দিবে বলেও মেরামত করে দেন নাই।
সোনাপুর ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার অভিভাবক সদস্য মোহাম্মদ আমানুল্লাহ জানান, মাদ্রাসা ও স্কুল চলাকালীন সময় কোমলমতি ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। নির্মাণ কাজ করার সময় কোন সুরক্ষা ব্যবস্থা নেয়া হয়নি যাতে করে বাচ্চাদের প্রাণহানির ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। বেশ কয়েকবার কয়েকটি ছেলেমেয়ে আহত হয়েছে। এ ভবন মালিক আগের স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এতই শক্তিশালী ছিল যে কেউ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারত না। কোন মানুষ প্রতিবাদ করলে তাকে চাঁদাবাজির মামলা ঠুকে দেওয়ার হুমকি দেন।

তৎকালীন মেয়র সহিদ উল্লাহ খান সোহেলের কাছে অভিযোগ করলে তিনি বলেন এই বিল্ডিং এর দিকে যে তাকাবে তাকে চাঁদাবাদের মামলায় ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। তাই এলাকাবাসীর কেউ মামলা করা থাক দুরের কথা ভয়ে প্রতিবাদও করেন না। নিরুপায় হয়ে এসব অন্যায় সহ্য করে নিচ্ছেন।

ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা মসজিদ কমিটির যুগ্ন সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ সাজিদ উল্লাহ সুমন জানান, যোহর এবং আসর নামাজের সময় সেন্টারিং এর মালামাল পড়ে অনেক মুসল্লি আহত হয়েছেন।বিভিন্ন সময় মসজিদের পক্ষ থেকে বলা হলেও কোন প্রতিকার পাননি। বরং রাজনৈতিক বিভিন্ন মহলের হুমকি-ধমকি আসে। বিল্ডিং এর মালামাল পরিবহনযোগে আসা-যাওয়া করায় পৌরসভার পাকা রাস্তাটিতে গর্ত, খানা খন্দক তৈরি হয়েছে।

পার্শ্ববর্তী রহুল আমিন হাউজিংয়ের ২৫-৩০ টি পরিবার এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। বিল্ডিংটি রাস্তা সংলগ্ন হওয়ায় মানুষের চলাচলে অনেক ঝুঁকি রয়েছে। এ রাস্তা দিয়ে স্কুল গামী ছাত্র-ছাত্রী বয়স বৃদ্ধ অসুস্থ ব্যক্তিরা চলাচল করে ভবন নির্মাণ কাজে পরিবহন আসা যাওয়া করায় রাস্তাটিরও বেহাল দশা।

মানুষের চলাচলের সমস্যা হচ্ছে। এসব বিষয়ে কেউ প্রতিকার চাইলি তাকে চাঁদাবাজ হিসেবে আখ্যায়িত করে মামলার ভয় ভীতি দিয়ে থাকেন। একই অভিযোগ করেন রুহুল আমিন হাউজিং এর বাসিন্দা সহকারী শিক্ষক আবুল বাশার। এক কথায় ভবন নির্মাণের সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকলে এতগুলি পরিবারের ক্ষয়ক্ষতি বা এলাকাবাসীর সমস্যা থাকতো না। ভবন মালিক ইচ্ছাকৃতভাবে কোন সুরক্ষা ব্যবস্থা না রেখে সম্পূর্ণ গায়ের জোরে, শক্তি খাটিয়ে ভবন নির্মাণ কাজ করছেন।

এতে করে এলাকাবাসী ভবনের আশপাশের পরিবারগুলি আশঙ্কায় দিন পার করছেন। ভুক্তভোগী এলাকাবাসী জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা সহ নাগরিক জীবনের নিরাপত্তা দানে ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানান।
এ বিষয়ে লন্ডন প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার শাহাদাত হোসেন দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

Check Also

পাংশা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস পালিত

॥  মোক্তার হোসেন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার ॥ রা জবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মঙ্গলবার …