॥ এ আর আজাদ সোহেল, নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি ॥
নোয়াখালী সদর উপজেলার কালাদরাপ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ মামলায় ওয়ারেন্ট জারি হওয়ার পরও তাঁকে গ্রেফতার করছে না পুলিশ।
আদালতে মামলার অধিক শুনানী শেষে অর্থ আত্মসাৎ ও হামলা ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় আদালত মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে গত ১৭ জুলাই গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে সুধারাম মডেল থানার ওসিকে আসামী গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়।
এমন অভিযোগ তুলে ওই ইউপি চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার এবং তাঁর মামলা-হামলা থেকে বাঁচার আকুতি জানিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন এক ভুক্তভোগী পরিবার। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে জেলা শহরের গোদার মসজিদ এলাকায় একটি পত্রিকার স্থানীয় কার্যালয়ে এই সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভুক্তভোগী মো. জহিরুল ইসলাম। এসময় তার মা আয়েশা খাতুন, স্ত্রী মারজাহান বেগম, ছেলে আবুল কালাম, মেয়ে ফাহিমা আক্তারসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। জহিরুল ইসলাম সদর উপজেলার কালাদরাপ ইউনিয়নের চুলডগি গ্রামের আলী আহম্মদের ছেলে।
তিনি পেশায় ইটভাটায় শ্রমিক সরবরাহের কাজে যুক্ত রয়েছেন। লিখিত বক্তব্যে জহিরুল ইসলাম বলেন, তিনি কুমিল্লার বিভিন্ন ইটভাটায় শ্রমিক সরবরাহের কাজ করতেন। ২০১৭ সালে আলী আশরাফ ইটভাটায় (এজিএস) ২৫জন শ্রমিক সরবরাহের চুক্তিতে এজিএস কোম্পানীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা গ্রহণ করেন।
এসময় হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় ওই ইটভাটায় শ্রমিক সরবরাহ করতে পারেননি। সেই মোতাবেক তিনি এজিএস কোম্পানীর প্রাপ্য টাকা ফেরত দিতে এজিএস কোম্পানীর সঙ্গে স্থানীয় কালাদরাপ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের মাধ্যমে সালিশ বৈঠক হয়।
শালিস বৈঠকে এজিএস কোম্পানীর প্রাপ্য ১০ লাখ টাকা ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের মাধ্যমে পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত মতে জহিরুল ইসলাম বিভিন্ন তারিখে চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের কাছে এজিএস কোম্পানীর ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা জমা দেন। বাকি ২০ হাজার টাকা চেক ও স্ট্যাম্প ফেরত নেওয়ার সময় দেওয়া হবে মর্মে সিদ্ধান্ত হয়।
জহিরুল ইসলাম বলেন, চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান আমার দেয়া ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা এজিএস কোম্পানীকে না দিয়ে নিজেই আত্মসাৎ করে নেন। পরে ওই টাকার জন্য এজিএস কোম্পানী আমার জন্য মামলা করলে আমি তাদের সঙ্গে সমঝোতা করে সেই মামলা থেকে মুক্তি পায়।
পরবর্তী আমি মিজান চেয়ারম্যানের কাছে আমার প্রাপ্য টাকা চাইলে সে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমার ওপর হামলা চালিয়ে আমি এবং আমার স্ত্রীকে পিটিয়ে গুরত্বর আহত করে। ওই ঘটনায় আমি আদালতে মিজানুর রহমান চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালতে অর্থ আত্মসাৎ ও হামলার ঘটনায় মামলা করি।
আদালতে মামলার অধিক শুনানী শেষে অর্থ আত্মসাৎ ও হামলা ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় আদালত মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে গত ১৭ জুলাই গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে সুধারাম মডেল থানার ওসিকে আসামী গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়। কিন্তু সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ায় পরোয়ানার ২ মাস অতিবাহিত হলেও আসামীকে গ্রেফতার করছেন না সুধারাম থানা পুলিশ।
জহিরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, আমি মামলার বাদি হয়েও আসামী এবং তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে পালি বেড়াচ্ছি। মামলা তুলে নিতে তারা আমার বাড়িঘরে বেশ কয়েকবার হামলা চালিয়ে আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে লাশ গুম করার হুমকি দিয়ে আসছে।
প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও পুলিশের উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে মিজানুর রহমানকে গ্রেফতারপূর্বক তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন ভুক্তভোগী জহিরুল ইসলাম।