॥ শাহ আলম, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি ॥
সি রাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট গ্রামের কৃতিসন্তান মাহবুবুল ইসলাম পলাশ। তিনি পেশায় কৃষি উদোক্তা।
ব্যতিক্রমী এই পাঠশালায় বয়সের কোন বাছবিচার নেই, শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ যে কেউ গাছ চেনার এবং গাছ সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করলে আসতে পারেন এই পাঠশালায়।
তার বাবা আবুল আজাদ সেখ, ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ছিলেন এবং মা তাকমিনা খাতুন গৃহিণী।সম্প্রতি তিনি পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ‘বৃক্ষরোপনে জাতীয় পুরস্কার ২০২২’ অর্জন করেছেন। বৃক্ষ গবেষণা, সংরক্ষণ ও উদ্ভাবন ক্যাটাগরীর ‘ছ’ শ্রেণিতে ২য় স্থান অধিকার করেন। এই এপ্রিল মাসের আগামী সপ্তাহে তাঁকে বৃক্ষরোপনে জাতীয় পুরস্কার-২০২৫ প্রদান করা হবে।
তিনি বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির বৃক্ষ সংগ্রাহক। তার বাড়ির পাশেই গড়ে তুলেছেন বিশাল সংগ্রহশালা, এখানে তিনি প্রায় চার শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগিয়েছেন। সুন্দরবনের সুন্দরী থেকে শুরু করে সবচেয়ে উঁচু বৃক্ষ বৈলাম, চা, কফি, বাঁশপাতা, সিভিট, মাল্লাম, বান্দরহলা, গুটিগুটিয়া, রক্তন, রাতা, তুন, আগর, ধুপ সহ বিভিন্ন বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির গাছ। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষেরা করম পরবে ব্যবহৃত করম বৃক্ষটিও স্থান পেয়েছে তার সংগ্রহশালায়। এই বৃক্ষটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মানুষের কাছে অতি পবিত্র।
এর ডাল তারা পুজোয় ব্যবহার করেন। ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর মানুুষেরা গাছটি কেউ নিজ হাতে রোপন করতে পারেননি। গাছটি সংরক্ষণ তাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় ছিল, সরকারিভাবে কেউ উদ্যোগ না নিলেও তিনি নিজে সংরক্ষণ করেছেন। মাহাবুবুল ইসলাম পলাশ, নিজে বাগান করার পাশাপাশি কৃষি খামার, ও পরিবেশ প্রকৃতি বাঁচিয়ে রাখার জন্য বিনামূল্যে সারা বাংলাদেশে বৃক্ষ বিতরণ ও বৃক্ষরোপণ করে চলেছেন।
সেই ধারাবাহিকতায় তিনি ইতোমধ্যে ৬৪ জেলার বেশ কয়েকটি জেলায় বিনামূল্যে বৃক্ষরোপণ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন, পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি জেলায় গাছ লাগাবেন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।সম্প্রতি তিনি তার বৃক্ষ সংগ্রহশালায় পরিবেশ ও প্রকৃতির পাঠশালা শুরু করেছেন।
ব্যতিক্রমী এই পাঠশালায় বয়সের কোন বাছবিচার নেই, শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ যে কেউ গাছ চেনার এবং গাছ সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করলে আসতে পারেন এই পাঠশালায়। ঘুরে ঘুরে দেখতে পারেন সকল গাছ, কোনো গাছ সম্পর্কে না জানলে, প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে সাথে সাথে বিশদ ভাবে জানতে পারেন গাছটি সম্পর্কে পাঠশালায়। প্রতিমাসের যে কোন শুক্রবার বা শনিবারে ক্লাস হয়; এই স্কুলের শিক্ষক তিনি নিজেই । বৃক্ষের প্রতি ভালোবাসা মাহবুবুল ইসলাম পলাশের ছোটবেলা থেকেই। ২০০০ সালে তিনি যখন স্কুলে পড়েন, তখন থেকেই বৃক্ষরোপণ শুরু করেন। বাংলাদেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং ভারত থেকেও পেয়েছেন পুরস্কার।
এছাড়াও বৃক্ষরোপণ ও পরিবেশ রক্ষার জন্য কৃষি ও অর্থনীতিতে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ “জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২৬” পেয়েছেন মাহবুবুল ইসলাম পলাশ।
প্রকৃতি প্রেমী ও বৃক্ষের বন্ধু বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বিনামূল্যে বৃক্ষ বিতরণ ও বৃক্ষরোপন করে চলেছেন। সেই সাথে সাধারণ মানুষকে বৃক্ষের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে প্রতিনিয়ত নিজ উদ্যোগে সচেতনতামূলক সভা ও সেমিনার করে চলেছেন। ভবিষ্যতে তিনি একটি কৃষি জাদুঘর তৈরি করতে ইচ্ছে প্রকাশ করেন।