॥ মনিরুজ্জামান মনি, সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি ॥
ঢা কা থেকে গুন্ডা ভাড়া করে সাতক্ষীরায় শ্বশুর বাড়িতে এসে হামলার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (১১ জুলাই) ভোরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার হাড়তদহ এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ হামলায় রোহনা আক্তার শীলা নামের একটি মেয়ে গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ ঘটনার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাড়তদহ এলাকার মৃত মোঃ নজরুল ইসলামের ছেলে মোঃ মইমুর হোসেন নিজ জামাতাসহ ১২জনকে আসামী করে সাতক্ষীরা সদর থানায় এজাহার দায়ের করেছেন।আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তার ছোট মেয়ে মাটিতে পড়ে ছটফট করতে থাকলে ২,৩,৪,৫নং আসামীরা তার ছোট মেয়েকে মাটিতে ফেলে জিআই পাইপ দিয়ে তার মাথা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকে। অন্যদিকে ৬,৭,৮,৯নং আসামীরা মোঃ মইমুর হোসেরেন বড় মেয়ে ও স্ত্রীকে জিআই পাইপ ও লাঠি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, দুই বছর পূর্বে মানিকগঞ্জ জেলার মানিকগঞ্জ থানার গোকালখালী গ্রামের মোঃ আব্দুল জলিলের ছেলে মোঃ রাকিবুল ইসলামের সাথে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার হাড়তদহ গ্রামের মোঃ মইমুর হোসেনের মেঝ মেয়ে রোকসানা আক্তার সীমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে জামাতা মোঃ রাকিবুল ইসলাম অদ্যবধি পর্যন্ত বিভিন্ন অজুহাতে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পরবর্তীতে মোঃ মইমুর হোসেন তার মেয়ের মাধ্যমে জানতে পারে জামাতা মোঃ রাকিবুল ইসলাম নেশাগ্রহস্থ ও অনলাইন জুয়ার একজন বড় এজেন্ট।
এরমধ্যে বিগত ১মাস ধরে স্ত্রী ও শ্বশুরের কাছে আরও টাকা দাবী করলে তা দিতে অস্বীকার করেন শ্বশুর মোঃ মইমুর হোসেন। এজাহার সূত্রে আরো জানা গেছে, এরই জের ধরে গত ০২ জুলাই সকাল অনুমান ১০টার দিকে রোকসানা আক্তার সীমা তার বাবার কাছে মোবাইল করে বলে রাকিবুল তাকে টাকার জন্য অনেক নির্যাতন করছে এবং তাকে ইলেকট্রিক শক দিয়েছে। সেসময় মেয়েকে সাতক্ষীরায় চলে আসার জন্য বললে জাসাতা রাকিবুল ইসলাম একটি ঘরে স্ত্রীকে আটকিয়ে রাখে।
সেই থেকে মেয়ের সাথে আর যোগাযোগ করতে না পেরে জামাতা রাকিবুল ইসলামের কাছে মোবাইল করলে জামাতা শ্বশুরে সাথে অশোভনীয় আচরন শুরু করে। একপর্যায়ে স্ত্রীকে সাথে নিয়ে ঢাকায় জামাতার বাড়ীতে যান মোঃ মইমুর হোসেন। জামাতার বাড়ীতে নিজ মেয়েকে না পেয়ে জামাতা রাকিবুল ইসলামের সাথে কথা বলতে গেলে শ্বশুর-শ্বাশুড়িকে বাড়ী থেকে বের করে দেয় জামাতা রাকিবুল ইসলাম।
মেয়েকে না পেয়ে নিরুপায় হয়ে স্ত্রীকে সাথে নিয়ে সাতক্ষীরায় চলে আসেন ভুক্তভোগী মোঃ মইমুর হোসেন। এরপর থেকে মেয়ের কোন যোগাযোগ হয়নি তাদের। এজাহার সূত্রে আরো জানা গেছে, সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে জামাতা রাকিবুল ইসলামসহ ১২জন একটি মাইক্রোযোগে সাতক্ষীরার হাড়তদহে মোঃ মইমুর হোসেনের বাড়িতে আসে। এসেই এজাহারে উল্লেখিত ১০ ও ১১নং আসামীদ্বয় মোঃ মইমুর হোসেনের বাড়ীর গেটে জোরে জোরে ধাক্কা দিতে থাকে। এসময় মোঃ মইমুর হোসেনের স্ত্রী গেট খোলা মাত্রই সকল আসামীরা বাড়ীর মধ্যে প্রবেশ করে মোঃ মইমুর হোসেরেন স্ত্রীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে।
এসময় মোঃ মইমুর হোসেন ও তার বড় মেয়ে সোহানা আক্তার স্মৃতি ও ছোট মেয়ে রোহনা আক্তার শীলা ঘর থেকে বাইরে আসার সাথে সাথে সকল সকল আসামীরা জিআই পাইপ, লোহার রড, কাঠের রুল নিয়ে তাদের উপর অতর্কিত হামলা শুরু করে। এ সময় ১নং আসামী জামাতা রাকিবুল ইসলামকে এহেন কর্মকান্ড করার কারণ জিজ্ঞাসা করা মাত্রই রাকিবুলের হাতে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মোঃ মইমুর হোসেনের মাথায় কোপ মারতে গেলে ছোট মেয়ে ঠেকাতে গিয়ে তার ডান কপালের উপর চোখের নীচে চোয়াল বরাবর লেগে কাটা রক্তাক্ত জখম হয় (যা ডাক্তার দ্বারা ২০ টি সেলাই দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে)’।
মোঃ মইমুর হোসেন এজাহারে আরো উল্লেখ করেছেন, আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তার ছোট মেয়ে মাটিতে পড়ে ছটফট করতে থাকলে ২,৩,৪,৫নং আসামীরা তার ছোট মেয়েকে মাটিতে ফেলে জিআই পাইপ দিয়ে তার মাথা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকে। অন্যদিকে ৬,৭,৮,৯নং আসামীরা মোঃ মইমুর হোসেরেন বড় মেয়ে ও স্ত্রীকে জিআই পাইপ ও লাঠি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে। এসময় জামাতা রাকিবুল ইসলাম মোঃ মইমুর হোসেনের মাথায় ছুরির উল্টো পিট দিয়ে আঘাত করে মাটিতে ফেলে দিয়ে বলে যে, তোর মেয়েকে শেষ করেছি এখন তোকে শেষ করব বলে রাকিবুল ইসলাম তার শ্বশুরর মোঃ মইমুর হোসেনকে মাটিতে ফেলে গলা চেপে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে।
মারামারি চলাকালিন সময়ে ০২ থেকে ০৯নং আসামীরা মোঃ মইমুর হোসেনের বড় মেয়ে ও স্ত্রীর পরনের কাপড় চোপড় টানা হেচড়া করে প্রায় বিবস্ত্র করে শ্লীলতাহানী করে। ০২-০৯ নং আসামীরা মোঃ মইমুর হোসেনের বসত ঘরে প্রবেশ করে ঘরে থাকা ৪ ভরি বিভিন্ন স্বর্ণের অলংকার, ২টি এ্যান্ডোয়েট মোবাইল, ঘরে রক্ষিত থাকা নগদ ৮০ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় আসামীরা আমাদেরকে ধরে আমার বসত ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে বাহিরে তালা মেরে পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার হুমকী দেয়। এসময় ভুক্তভোগীদেও ডাকচিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন সহ গ্রামের লোকজন এসে উপস্থিত হলে আসামীরা বাড়ীর আশপাশে লুকিয়ে পড়ে’।
এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ঘটনার সময় ১২নং আসামী বাড়ীর গেটে পাহারা দিচ্ছিল। গ্রামের লোকজন ঘরের তালা ভেঙ্গে ভুক্তভোগীদের উদ্ধার করে এবং পার্শ্ববর্তী সীমান্তে নিয়োজিত বিজিবি সদস্যরা সংবাদ পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে আসামীদেরকে গ্রামের লোকজনের সহযোগীতায় আটক করে থানা পুলিশের সংবাদ দেয়। গ্রামের লোকজন ভুক্তভোগীদের উদ্ধার কওে চিকিৎসার জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে’। মামলার আসামীরা হলেন, ভুক্তভোগী মোঃ মইমুর হোসেনের জামাতা মানিকগঞ্জ জেলার মানিকগঞ্জ থানার গোকালখালী গ্রামের মোঃ আব্দুল জলিলের ছেলে মোঃ রাকিবুল ইসলাম, ঢাকা জেলার উত্তরা-১২৩০ এর উত্তরা ব্যাপারীপাড়ার মৃত আঃ আওয়ালের ছেলে মোঃ আরিফ হোসেন, মোঃ মামুন হোসেন, সাভারের মৃত শাহ আলমের ছেলে মোঃ তানভিরুল ইসলাম, গাজীপুর জেলার টংগী থানার টংগী পূর্বপাড়ার মোঃ দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মোঃ রাহাত হোসেন, ওই এলাকার মোঃ শুকুর আলীর ছেলে মোঃ নাইম হোসেন, টংগী পূর্ব থানার এরশাদনগরের মৃত মুকুল হোসেনের ছেলে মোঃ সাগর, ওই এলাকার মোঃ জাহিদুল ইসলামের ছেলে মোঃ সাগর হোসেন, এরশাদনগরের মোঃ মফিজ মিয়ার ছেলে মোঃ মামুন হোসেন, উত্তর খান ব্যাপারীপাড়ার মামুন আহম্মদের স্ত্রী মোছাঃ নার্গিস খাতুন, একই এলাকার শফিকুল ইসলামের স্ত্রী মোছাঃ মিনারা ও ভোলা জেলার দৌলতখান থানার হাওয়লাদার বাড়ী এলাকার মৃত হারুন মিয়ার ছেলে মোঃ সাকিল হোসেন। সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামিনুল হক এজাহার প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ‘এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে’।