॥ মাসুদ রানা, বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি ॥
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের প্রভাব পড়েছে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলায়। রবিবার (৪ আগষ্ট) থেকে ছাত্রদের ডাকা এ কর্মসূচির ফলে মোংলা বন্দরের জেটিতে খালাস হওয়া কোন পণ্য বের হয়নি। একই সাথে এই বন্দরে আমদানি করা বিভিন্ন ব্রান্ডের রিকন্ডিশন গাড়িও খালাস করতে পারেনি ব্যবসায়ীরা।
মোংলা বন্দরে এই মূহুর্তে প্রায় এক হাজার ৩০০ গাড়ি বিভিন্ন শেডে আটকা আছে উল্লেখ করে বন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারি ট্রাফিক ম্যানেজার মোঃ কুদরত আলী বলেন, এর মধ্যে টয়োটা, করোলা, নিশান, লেক্সাস, হাইয়েছ ও নোহাসহ বিভিন্ন নামিদামি ব্যান্ডের উল্লেখযোগ্য গাড়ি রয়েছে। কিন্ত ছাত্র আন্দোলনের কারণে রবিবার সকাল থেকে আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা গাড়ি খালাস করতে আসেনি।
ফলে বন্দর জেটির বিভিন্ন শেডে আটকে আছে প্রায় এক হাজার ৩০০ বিলাসবহুল গাড়ি। তবে এদিন স্বাভাবিক ছিল বন্দরের পশুর চ্যানেলে অবস্থান করা বানিজ্যিক জাহাজের পণ্য খালাস-বোঝাই। খালাস হওয়া পণ্য নদী পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রবিবার (৪ আগষ্ট) বিকেলে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
বাংলাদেশ রিকন্ডিশন ভেহিক্যাল ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের (বারবিডা) হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, আবার বড় ধরণের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়লেন তারা। রবিবার থেকে ছাত্রদের অসহযোগ আন্দোলন এবং আগামী তিনদিন সাধারণ ছুটির ঘোষনা হওয়ায় বেকায়দায় পড়তে হয়েছে তাদের। রবিবার (৪ আগষ্ট) মোংলা বন্দর থেকে ৭০ থেকে ৮০ টি গাড়ি বের করার শিডিউল থাকলেও ছাত্র আন্দোলনের ফলে বন্দর থেকে গাড়ি বের করতে পারেনি। এ কারণে তাদের একদিনে ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বন্দর থেকে এত দামের গাড়ি বের করার পর সড়কে দুস্কৃতিকারীরা সেই গাড়ি জালিয়ে দিতে পারে। সে কারণে কোন আমদানিকারকরা তাদের গাড়ি বের করতে সাহস করেনি।
দেশে গাড়ি আমদানিকারকের শীর্ষ এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ডন আরও বলেন, ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলে জাপান থেকে গাড়ি আমদানি করা হয়। কিন্তু ব্যাংক বন্ধ থাকলে এলসি খুলতে না পারা এবং আমদানি করা গাড়ি খালাস করতে না পারলে বন্দর ইয়ার্ডে যতদিন তাদের গাড়ি পড়ে থাকবে, তাতে অতিরিক্ত ল্যান্ডিং চার্জ গুনতে হবে। এই অবস্থায় বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে ব্যবসায়ীরা গাড়ি আমদানি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে বলে তিনি শংকা প্রকাশ করেন।
এদিকে মোংলা বন্দরে এই মূহুর্তে প্রায় এক হাজার ৩০০ গাড়ি বিভিন্ন শেডে আটকা আছে উল্লেখ করে বন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারি ট্রাফিক ম্যানেজার মোঃ কুদরত আলী বলেন, এর মধ্যে টয়োটা, করোলা, নিশান, লেক্সাস, হাইয়েছ ও নোহাসহ বিভিন্ন নামিদামি ব্যান্ডের উল্লেখযোগ্য গাড়ি রয়েছে। কিন্ত ছাত্র আন্দোলনের কারণে রবিবার সকাল থেকে আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা গাড়ি খালাস করতে আসেনি। সে কারণেই এসব গাড়ি বন্দর জেটিতে আটকা পড়েছে। তবে তারা গাড়ি বের করে নিতে চাইলে বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে সর্বচ্চো নিরাপত্তা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
জানা যায়, ২০০৯ সালে ৮ হাজার ৯০০ টি গাড়ি আমদানির মাধ্যমে মোংলা বন্দরে গাড়ি আমদানি শুরু হয়। গাড়ী আমদানির পর থেকে মোংলা বন্দর লাভজনক বন্দরে পরিনত হয়। এছাড়া এখন দেশে আমদানিকৃত গাড়ির প্রায় ৮০ ভাগ গাড়িই এখন মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি করা হচ্ছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান জানান, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এখন মোংলা বন্দর থেকে ঢাকায় যেকোন পণ্য পরিবহণে সময় লাগছে মাত্র ৩ থেকে ৪ ঘন্টা। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব ২৬০ কিলোমিটার, সেখানে ঢাকা থেকে মোংলা বন্দরের দূরত্ব মাত্র ১৭০ কিলোমিটার। ফলে তুলনামূলক একটি গাড়ি বন্দর থেকে খালাসের পর খুবই কম সময়ে, স্বল্প খরচে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছাতে সক্ষম হবে বিধায় মোংলা বন্দর ব্যবহার করে গাড়ি আমদানি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাড়ি আমদানির ফলে এই বন্দরের রাজস্ব আদায়ও বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমদানিকৃত গাড়ির শতভাগ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে মোংলা বন্দর।