॥ মাসুদ রানা, বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি ॥
তি ন মাস বন্ধ থাকার পর কাল ১লা সেপ্টেম্বর থেকে খুলছে সুন্দরবন। তাই শেষ মূহুর্তের সকল প্রস্তুতি সেরে নিয়েছেন জেলে ও পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। রবিবার মধ্যরাত থেকে বনবিভাগের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে সোমবার থেকে বনে প্রবেশ করতে পারবেন তারা।
পর্যটন ব্যবসায়ী মোঃ এমাদুল ও মোঃ জাহিদ মোল্লা বলেন, তিন মাস বসে থেকে ট্যুরিস্ট জাহাজের বিভিন্ন ত্রুটির সৃষ্টি হয়েছিল। সেগুলো ঠিকঠাক করে, রং করে জাহাজ সাজানো হয়েছে। বেশির ভাগ জাহাজেরই প্যাকেজ বুকিং হয়ে গেছে। আমরা তাদের নিয়ে সোমবার ভ্রমণে বের হবো।
বন্যপ্রাণী, গাছপালা ও মাছের প্রজনন বাড়াতে গত ১লা জুন থেকে টানা তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বনবিভাগ। মুলত প্রজনন মৌসুম হওয়াতে প্রতি বছর এই সময় সুন্দরবনে মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকে। ১লা সেপ্টেম্বর থেকে উঠে যাচ্ছে সেই বিধি নিষেধ। তাই শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতি সেরে নিয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও জীবিকার জন্য সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল বনজীবিরাও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। তিন মাসের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নতুন উদ্যোমে তৈরি হয়েছেন সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জেলে, বাওয়ালী ও ট্যুর অপারেটরা।
তিন মাস সুন্দরবন বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে কষ্টে জীবনযাপন করেন বন নির্ভরশীল বিশাল জনগোষ্ঠী। এরমধ্যে বেশি কষ্টে দিনাতিপাত করেছেন জেলেরা। সুন্দরবনের নদী খালে মাছ ধরতে না পেরে মানবেতর দিন কেটেছে তাদের। তিন মাস পর সুন্দরবন খুলে দেয়া হচ্ছে, তাই তারা জাল, নৌকা প্রস্তুত করে নিয়েছেন। সোমবার থেকেই তারা বনের নদী খালে নেমে পড়বেন।
আর পর্যটন ব্যবসায়ীরাও তাদের নৌযানগুলো রং দিয়ে নতুন করে সাজিয়ে তুলেছেন। অনেকেরই পর্যটন বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। অপেক্ষা এখন সোমবারের। সোমবার সকালেই দেশী-বিদেশী পর্যটক নিয়ে তারা প্রবেশ করবেন গহীন বনে।
বন নির্ভরশীল চিলার জেলে বিদ্যুৎ মন্ডল ও কানাইনগরের জেলে আঃ রশিদ বলেন, তিন মাস সুন্দরবন বন্ধ থাকায় এখানকার শত শত জেলেকে অলস ঘরে বসে থাকতে হয়েছে। এই তিন মাসে ধার-দেনা ও বাকী করে সংসার চালাতে হয়েছে সকলকে। এখন নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে, তাই সকলে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিয়েছে।
পর্যটন ব্যবসায়ী মোঃ এমাদুল ও মোঃ জাহিদ মোল্লা বলেন, তিন মাস বসে থেকে ট্যুরিস্ট জাহাজের বিভিন্ন ত্রুটির সৃষ্টি হয়েছিল। সেগুলো ঠিকঠাক করে, রং করে জাহাজ সাজানো হয়েছে। বেশির ভাগ জাহাজেরই প্যাকেজ বুকিং হয়ে গেছে। আমরা তাদের নিয়ে সোমবার ভ্রমণে বের হবো।
এদিকে বনের ১১টি পর্যটন স্পটও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে প্রস্তুত করেছে বনবিভাগ। গত মৌসুমে সুন্দরবনের পর্যটকের সংখ্যা ছিল প্রায় দেড় লাখ। চলতি মৌসুমে তা ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা বলছেন বনবিভাগ।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আজাদ কবির বলেন, তিন মাস ধরে বনে কোন মানুষই প্রবেশ করতে পারেনি। এখন নিষেধাজ্ঞা শেষে বনে লোকজনের আগমন ঘটবে। তাই বনের সকল স্পষ্ট প্রস্তুত করা হয়েছে। আমরা সব সময় পর্যটকদের সর্বাত্মক সেবা দেয়ার প্রচেষ্টা করে আসছি।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, তিন মাসের প্রজনন মৌসুম নির্বিঘ্ন হওয়ায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ হয়েছে। বেড়েছে বন্যপ্রাণী, মাছ ও গাছের সংখ্যাও। সুন্দরবন সেজেছে অপরুপ সাজে। এই মুহুর্তে যারা বনে যাবেন তারা মুগ্ধ হবেন। আর জেলেরাও অধিক পরিমাণ মাছ পাবেন।