॥ মাসুদ রানা, বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি ॥
মোংলা-খুলনা জাতীয় মহাসড়কের অন্তত ১০ কিলোমিটার সড়কের এখন নাজুক দশা। গতি কমিয়ে খানা খন্দকের উপর দিয়ে প্রতিনিয়ত হেলেদুলে চলাচল করছে হাজার হাজার যানবাহন। সড়ক বিভাগ মাঝে মধ্যে খানা খন্দে কিছু ইট ফেলে সাময়িক সংস্কার করলেও তা তেমন কোনো কাজে আসছে না। এদিকে সংস্কার কাজের ধীরগতির কারণে সড়কটিতে প্রায় সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট। ঘন্টার পর ঘন্টা যানবাহন চালক ও যাত্রীদের যানজটে আটকে থাকার কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সময় মতো যাত্রী নিয়ে গাড়ি আনা নেয়ায় মোংলায় পৌছাতে বিলম্ব হয়। এ ছাড়া খানা খন্দ ও গর্তে পড়ে প্রায়ই গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ অকেজো হয়ে যাচ্ছে। মোংলা-খুলনা রুটের নিয়মিত কয়েকজন অফিস যাত্রী জানান, অনেক সময় যানজটে পড়ে তাদের ঘন্টার পর ঘন্টা গাড়িতে বসে অপেক্ষা করে চরম বিড়ম্ভনায় পড়তে হয়।
জানা গেছে, এক সময় মোংলা সমুদ্র বন্দর দিয়ে আমদানী রপ্তানী পণ্য নৌ পথে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে আনা নেয়া হতো। এতে সময় ব্যয় হতো অনেক বেশি। এ অবস্থার অবসান ঘটাতে মোংলার সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ১৯৮০ সালে মোংলা থেকে খুলনা রূপসা ঘাঁট পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটারের এ সড়কটি নির্মাণ করা হয়। এর ফলে মোংলা বন্দরের উন্নয়ন ও অগ্রগতি বৃদ্ধি পায়। পরবর্তিতে খানজাহান আলী (রূপসা) সেতুর মাধ্যমে খুলনা শহরের বাইপাশ দিয়ে গল্লামারী পর্যন্ত সড়কটি দীর্ঘায়িত করা হয়। এখন বন্দরের ব্যস্ততা বেড়েছে অনেক বেশি। প্রতিদিন এ মহাসড়ক দিয়ে অসংখ্য আমদানী-রপ্তানী পণ্যবাহি গাড়িসহ হাজার হাজার বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করে থাকে।
বর্তমানে মাত্র ১০ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশায় সব ধরনের যানবাহনকে ভোগান্তির মধ্যে ফেলেছে। এ মহাসড়কের খুলনা থেকে মোংলায় আসার পথিমধ্যে রামপাল উপজেলার ঝনঝনিয়া চেয়ারম্যান মোড নামক বাসস্ট্যান্ড পার হলেই ভোগান্তি শুরু হয়।
এ বাসস্ট্যান্ড থেকে মোংলার পাওয়ার হাউজ পর্যন্ত টানা দশ কিলোমিটার সড়ক এখন খানা খন্দ ও গর্তে রূপ নিয়েছে। বৃষ্টি হলেই সৃষ্ট খানা খন্দ ও গর্তে হাটু সমান পানি জমে যায়। মোংলা থেকে পণ্য বোঝাই ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ, যাত্রিবাহী বাস ও অন্যান্য সব ধরনের ছোট-বড় যানবাহন খানা খন্দক ও গর্ত পেরিয়ে হেলেদুলে মন্থর গতিতে চলাচল করছে।
কোনো কোনো সময় খানা খন্দকে যানবাহনের চাকা আটকে গেলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া মহাসড়কে সৃষ্ট খানা খন্দ ও গর্ত সাময়িক সংস্কার করার সময় সড়কের এক পাশ বন্ধ রেখে ওয়ান ওয়ে রুটে সব ধরনের যানবাহনকে চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে।
এম্বুলেন্সে থাকা রোগী ও তাদের স্বজনদের এ সময় ভোগান্তির অন্ত থাকে না। এ অবস্থায় সব ধরনের যানবাহন চালক ও যাত্রীদের মাঝে মধ্যে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ সড়কে নিয়মিত চলাচল করে হেলাল উদ্দিন নামের এক ট্রাক চালক বলেন, মহাসড়কটির অন্তত দশ কিলোমিটার রাস্তায় ভাঙ্গা চোরা ও গর্ত থাকায় মোংলা বন্দর থেকে মালামাল নিয়ে আমার মতো শত শত ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছি।
সময় মতো মালামাল গন্তব্যে পৌছানো যাচ্ছেনা। মাত্র ১০/১১ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার না করায় এমন বেহাল দশা হয়েছে। মোঃ আলিম নামের ঢাকা-মোংলা রুটে নিয়মিত চলাচলকারী একটি যাত্রীবাহি পরিবহনের ড্রাইভার জানান, বিশেষ করে সড়কের বাবুরবাড়ি পুরাতন বাসস্ট্যান্ড মোড় থেকে বাবুরবাড়ি জিরো পয়েন্ট ও দিগরাজ বাসস্ট্যান্ড থেকে পাওয়ার হাইজ পর্যন্ত খানা খন্দ ও গর্তে পরিপূর্ণ।
এ কারণে সময় মতো যাত্রী নিয়ে গাড়ি আনা নেয়ায় মোংলায় পৌছাতে বিলম্ব হয়। এ ছাড়া খানা খন্দ ও গর্তে পড়ে প্রায়ই গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ অকেজো হয়ে যাচ্ছে। মোংলা-খুলনা রুটের নিয়মিত কয়েকজন অফিস যাত্রী জানান, অনেক সময় যানজটে পড়ে তাদের ঘন্টার পর ঘন্টা গাড়িতে বসে অপেক্ষা করে চরম বিড়ম্ভনায় পড়তে হয়। সময়মতো অফিস ও বাড়িতে পৌঁছানো যায় না।
এ ব্যাপারে বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ফরিদ উদ্দিন বলেন, মোংলা-খুলনা জাতীয় মহাসড়কের যেসব স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেসব স্থান আমরা মেরামত করেছি। কিছু জায়গা মেরামত করতে বাকি আছে। পর্যায়ক্রমে সে সব জায়গা মেরামত করা হবে। মেরামত কাজ চলমান আছে। বর্ষাকালে সংস্কারে হাত দিতে না পারায় একটু বেশি সমস্যা হয়েছে। এটাও ঠিক হয়ে আসবে।