॥ আবুল হোসেন, রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি ॥
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অর্ধ শতাধিক নারী। একদিকে এ সকল নারীরা অর্থ উপার্জন করছেন, অপরদিকে তাদের উৎপাদিত ভার্মি কম্পোস্ট সারে কৃষিতে ব্যাপক অবদান রাখছে। বিষমুক্ত ও পরিবেশ বান্ধব এ সারের চাহিদাও বাড়ছে দিনদিন।সরেজমিন গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাকলা ইউনিয়নের স্বরূপার চক গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এ গ্রামের অর্ধশতাধিক নারী নিজেদের প্রচেষ্টায় বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) তৈরির হাউজ। আর ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরীতেই নারীদের ব্যস্ততা। কারণ ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন ও বিপনণে তাদের সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা। এক সময়ের নিত্য অভাবকে জয় করে এখন তারা স্বাবলম্বী। সমাজ তথা পরিবারেও তাদের মাথা উচু করে দিয়েছে এই কর্মযজ্ঞ।
এ গ্রামের নারীদের উৎপাদিত ভার্মি কমপোস্ট সার বিক্রিতেও কোন ঝামেলা পড়তে হয় না। কারণ শুধু গোয়ালন্দ না, রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এসে তাদের উৎপাদিত টন টন সার বাড়ি থেকেই ১২ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যায়।
কথা হয় এই গ্রামের গৃহবধু আলেয়া বেগমের সাথে। আলাপকালে তিনি জানান, এক সময় দু’টি টাকার জন্য স্বামীর কাছে ধরনা ধরে থাকতে হত। ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদান করে তিনি এখন স্বাবলম্বী। তিনি এখন সংসারেও নিজের উপার্জিত টাকা খরচ করে সম্মানিত বোধ করেন। সেই সাথে ছেলে-মেয়েদের বিভিন্ন প্রয়োজনে তাদের হাতেও কিছু টাকা দিতে পারেন।
উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে কৃষি উন্নয়ন বহুমূখী সমবায় সমিতির মাধ্যমে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে আলেয়া বেগমের মত ওই গ্রামের অর্ধশত নারী এখন স্বাবলম্বী। এ গ্রামের নারীদের উৎপাদিত ভার্মি কমপোস্ট সার বিক্রিতেও কোন ঝামেলা পড়তে হয় না। কারণ শুধু গোয়ালন্দ না, রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এসে তাদের উৎপাদিত টন টন সার বাড়ি থেকেই ১২ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যায়।
এই গ্রামের বেশীর ভাগ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে কৃষির উপর নির্ভরশীল। তবে গ্রামটির বিশেষত্ব হচ্ছে পুরুষরা মাঠে কাজ করলেও গৃহিণীরা বাড়িতে গবাদি পশু পালন এবং গোবর থেকে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করছেন। এই গ্রামের নারীরা কোনোভাবেই পুরুষের চেয়ে পিছিয়ে নেই।
অপর নারী খোদেজা বেগম জানান, অনেক আগে থেকেই তার মধ্যে নিজে কিছু করার প্রয়াস ছিল। এ লক্ষে তিনি বাড়িতে গরু-ছাগল পালনের চেষ্টা করে আসছিলেন। এরই মধ্যে কৃষি উন্নয়ন বহুমূখী সমবায় সমিতির সদস্যদের কৃষি অফিস থেকে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনের প্রশিক্ষণ প্রদান করে। তিনি সেই প্রশিক্ষণ গ্রহন করে এই সার উৎপাদন শুরু করেন। এতে তিনি বেশ লাভবান। কারণ এক সময় গরুর গোবর ফেলে দেয়া হত।
সেই ফেলে দেয়া জিনিসই এখন অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু তিনিই নন, এই গ্রামের প্রত্যেকটি বাড়িতেই রয়েছে এই সার তৈরির কারখানা, যেগুলোর মূল উদ্যোক্তা গৃহবধূরা। এছাড়া তাদের দেখাদেখি এখন অন্য গ্রামের গৃহবধূরাও এই সার তৈরিতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
কৃষি উন্নয়ন বহুমূখী সমবায় সমিতির সাধারন সম্পাদক বিউটি আক্তার জানান, গ্রামের গৃহবধূদের তাদের সমিতির মাধ্যমে কেঁচো সার তৈরির ধারণাদেন স্থানীয় কৃষি অফিস। তারাই প্রশিক্ষণ ও কেঁচো সরবরাহ করেছিলেন। বর্তমানে তাদের সমিতির অন্তত ৫২ জন্য সদস্য নিজ বাড়িতে ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরী করছেন। এতে তারা সবাই লাভবান। স্থানীয় কৃষি অফিস তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি উৎপাদিত সার বিক্রিতেও সহযোগিতা করে থাকে।
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি অফিসার মো. খোকন উজ্জামান জানান, ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনে তেমন কোন খরচ নেই বললেই চলে। নিজেদের বাড়িতে পালিত গরুর গোবর অথবা সামান্য দামে গোবর কিনেই এই সার উৎপাদন করা যায়। গোয়ালন্দ উপজেলা এই সার উৎপাদন করে ৫০ জনেরও বেশী নারী স্বাবলম্বী হয়েছেন।
এছাড়া ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহারে মাটি স্বাস্থ্যবান হয়। বিষমুক্ত শাক-সবজিসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনে কেঁচো সার খুবই কার্যকর। একজন কৃষক এই সার একবার ব্যবহার করলে, তিনি নিজের তাগিদে এই সারের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা কৃষকদের রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট সারের ব্যবহার বাড়াতে পরামর্শ দিয়ে থাকি। এছাড়া প্রতিনিয়ত জৈব সার উৎপাদনের সাথে জড়িতদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছি।’