॥ আবুল হোসেন, রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি ॥
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পদ্মা নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধির কারনে নদীতে তেমন মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। হতাশ জেলেদের অনেকে জাল গুটিয়ে রাখছেন। মৌসুমে রূপালী ইলিশের দেখা কিছুটা মিললেও বছরের অধিকাংশ সময়ই এর দেখা নেই। এ নিয়ে হতাশা বিরাজ করছে মৎস্যজীবী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ী পদ্মা নদীতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭৯৭ মেট্রিক টন ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮৩০ টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮১১ দশমিক ৮৬ টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৩৬ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। এ ছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮২৬ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে কম হয়েছে। রাজবাড়ী অঞ্চল ২০২২-২৩ অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে ১২ মেট্রিক টিন কম ইলিশ উৎপাদন।
মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, নদীতে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। যার কারনে মাছ কম ধরা পড়ছে।
এ দিকে দিন দিন ইলিশের উৎপাদন কমতে শুরু করেছে । ২০২২-২৩ অর্থবছরে জেলায় ৮২৬ মেট্রিক ইলিশ উৎপাদন হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১২ মেট্রিক টন কম।
জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ী পদ্মা নদীতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭৯৭ মেট্রিক টন ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮৩০ টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮১১ দশমিক ৮৬ টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৩৬ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। এ ছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮২৬ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে কম হয়েছে। রাজবাড়ী অঞ্চল ২০২২-২৩ অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে ১২ মেট্রিক টিন কম ইলিশ উৎপাদন।
জেলেদের অভিযোগ, প্রজনন মৌসুমে যখন ইলিশ ধরা বন্ধ ছিলো তখন অনেক জেলেই সরকারিভাবে কোনো সহায়তা পাননি।এমনকি সরকারিভাবে জেলে নিবন্ধন তালিকা থেকে বাদ পড়েছে অনেক প্রকৃত জেলে। তবে মৎস্য কর্মকর্তা বলছেন, প্রকৃত জেলেদের নিবন্ধন তালিকা অন্তর্ভুক্ত হওয়ার এখনো সুযোগ রয়েছে।
সরজমিনে দৌলতদিয়া ৭নম্বর ফেরিঘাট সংলগ্ন সাত্তার মেম্বার পাড়া এলাকা গিয়ে দেখা যায়, নদীতে পানি বৃদ্ধির কারনে অনেক জেলেরা পাড়ে নৌকা ভিড়িয়ে জাল মেরামত করছে। আবার কেউ কেউ নৌকা মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে। কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ছেঁড়া-ফাটা জাল মেরামত করছেন। কেউবা জাল গুটিয়ে খামাল (স্তূপ) দিয়ে রাখছেন। আবার কেউ নৌকার সংস্কার কাজও করছেন।
জেলে হরিপদ হালদার নদীর পাড়ে বসে ছেঁড়া জাল মেরামত করছেন। তিনি বলেন, পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির কারনে ৬ দিন যাবত কোন মাছ পাইনি। আজ একবার নৌকা নিয়ে নদীতে সহযোগীরা সহ আমি গিয়েছিলাম। কোন মাছ না পাওয়ায় নদীর পাড়ে হাল মেরামত করছি। আমাদের সুতি জালে বড় মাছ ধরা পড়ে। জাল ছেড়া থাকলে ছোট ছোট মাছ বেড়িয়ে যায়। তাই সকলে মিলে জালগুলো ঠিক করছি।
জেলে হযরত আলি বলেন, একসময় পদ্মা নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ত, তখন দামও কম ছিলো, এখন পদ্মার কমে যাওয়ায় বেশি দামে ইলিশ কিনতে হচ্ছে। এ কারণে মধ্যমায়ের মানুষের ইলিশ কেনার সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। সপ্তাহ খানেক হলো কোন মাছই পাইনা। নৌকায় রান্না করার মতও কোন মাছ জালে উঠছেনা।
আজ নৌকায় মুগডাল রান্না ও আলুভর্তা করেছি। ‘আমার দুটি নৌকায় ১০ জনের প্রতিদিন গড়ে ১ থেকে দেড় হাজার টাকা খরচ হয়। বর্তমানে ধারদেনা করে আমাদের খেতে ও চলতে হচ্ছে।
দৌলতদিয়া ৫ নম্বর ফেরিঘাটের মাছ ব্যবসায়ী মো. ছিদ্দিক শেখ বলেন, আমরা জেলেদের ওপর নির্ভরশীল। তারা যদি মাছ না পায় তাহলে আমরা কীভাবে মাছ কিনব, আর কীভাবে এই মাছ অন্যত্র বিক্রি করে ব্যবসা করব। তারা যেমন মাছ না পেলে ক্ষতিগ্রস্ত হন, ঠিক তেমনি আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হই।
গোয়ালন্দ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা রাজবাড়ী সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোস্তফা আল রাজীব বলেন, এ বছর পদ্মায় অপেক্ষাকৃত ইলিশ কম লক্ষ্য করা গেছে। অভিযান পরিচালনার সময় দেখা যায় ইলিশ কম। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে নদীর বিভিন্ন জায়গায় চর পড়ে যাচ্ছে এবং নদীর অনেক অংশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
বিভিন্ন স্থানে চর পড়ার কারনে ইলিশের যে গতিপথ তা বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং বৃষ্টিপাতও এ বছর কম হচ্ছে। যার কারনে জেলেরা যে পরিমাণ মাছ পাওয়ার কথা সে পরিমাণে পাচ্ছে না।
আমরা দেখছি বর্তমানে সাগড়ে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে, আমরা আশা করছি সামনের দিনগুলোতে যদি সাগড়ে বা নদীতে কোন বাঁধা না পড়ে তাহলে পদ্মা নদীতে জেলেদের জালে আবার ইলিশ ধরা পড়বে। তিনি আরও বলেন, জেলেদের আমরা সবসময় নিরুৎসাহিত করি। নদীতে যারা অবৈধ জাল দিলে ছোট ছোট মাছের পোনা ও মাছ ধরছে তাদের জন্যও বড় মাছ কমে যাচ্ছে।