॥ মনিরুজ্জামান মনি, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ॥
নির্বাচন খরচ যোগাতে সরকারি রাস্তার পাশে মেহগনি গাছ কেটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। গত রবিবার দিবাগত রাত ১ টার পর সাতক্ষীরারর কলারোয়া উপজেলার ত্রিশ মাইল-সরসকাটি সড়কের ধানদিয়া চৌরাস্তা মোড়ে জয়নগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে কলারোয়ার ধানদিয়া চৌরাস্তার মোড়ে গিয়ে দেখা গেছে, জয়নগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুর রহমানের ভাড়া করা আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে নির্বাচনী অফিসের গেট করা হচ্ছে। সামনেই রাস্তার পাশের সরকারি মেহগনি গাছ কেটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যাতে গাছটির কোন চিহ্ন না বোঝা যায় সেজন্য বিচালি পুড়িয়ে গাছের গুড়ির উপর ফেলে রাখা হয়েছে।
যদিও সাতক্ষীরা-১ আসনের নৌকার প্রার্থী এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানিয়েছেন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা জানান, আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর পক্ষে এলাকায় খরচ বহন করতে জয়নগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ধানদিয়া চৌরাস্তা বাজার কমিটির সভাপতি মাষ্টার আজিজুর রহমান তার অফিসের সামনে ৩০ হাজার টাকারও বেশি মূল্যের একটি মেহগনি গাছসহ লক্ষাধিক টাকার আরো তিনটি সরকারি গাছ বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন।
রবিবার রাত ১১টার পর আওয়ামী লীগ অফিসের সামনের মেহগনি গাছটি অফিস খোলা থাকাকালিন সময়ে করাত দিয়ে কেটে ১৪/১৫ জন একটি মিনি ট্রাকে করে নিয়ে যায়। তবে ওই এলাকায় আরো তিনটি মেহগনি গাছ শুক্রবার রাতে কে বা কাহারা কেটে নিয়ে গেছে বলে তিনি শুনেছেন।
সে অনুযায়ী গাছগুলি একজন কাঠ ব্যবসায়ির কাছে বিক্রি করলে তিনি রবিবার রাত ১টার পর ধানদিয়া চৌরাস্তা মোড়ে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনের (সভাপতির ভাড়া করা অফিস) মেহগনি গাছটি শ্রমিক লাগিয়ে কেটে নিয়ে যান। বিষয়টি যাতে কেউ জানতে না পারে সেজন্য শীতের অধিক রাতে এ কাজ করে গাছের গোড়ায় বিচালি জ্বালিয়ে ছাই ফেলে রাখা হয়।
এ সময় আওয়ামী লীগ অফিসে অনেক নেতা কর্মীর উপস্থিতি ছিল। নৈশ প্রহরী ফেরাজতুল্লাহ ও আব্দুল মালেক বাজারে কর্তব্যরত অবস্থায় ছিলেন। পরে গাছ কেটে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়াও শুক্রবার রাতে ধানদিয়া-চৌরাস্তা সড়কের গাজী ভাটার পাশে একটি মেহগনি গাছ, চৌরাস্তা-পাটকেলঘাটা সড়কের ধানদিয়া মাঠের পাশে রাস্তায় একটি মেহগনি গাছসহ দুই দিনে মোট চারটি গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে।
তবে সকাল থেকে বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন ওঠার পর থেকে রবিবার রাতে গাছটির গুড়ি শিকড়সহ তুলে ফেলে দিয়ে সেখানে মাটি ভরাটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ধানদিয়া চৌরাস্তা মোড়ের ব্যবসায়ি হাবিবুর রহমান জানান, বাজারে রাস্তার উপর থাকা চারটি গাছ দুটি মসজিদের উন্নয়নে ব্যবহারের জন্য দুই বছর আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জয়নগর ইউনিয়ন ভ‚মি কর্মকর্তার কাছ থেকে অনুৃমতি নেওয়া হয়।
কিন্তু আওয়ামী লীগ অফিসের সামনের গাছসহ চারটি গাছ কাটতে বাধা দেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও বাজার কমিটির সভাপতি আজিজুর রহমানসহ কয়েকজন। অথচ রবিবার রাত ১১টার পর আওয়ামী লীগ অফিসের সামনের মেহগনি গাছটি অফিস খোলা থাকাকালিন সময়ে করাত দিয়ে কেটে ১৪/১৫ জন একটি মিনি ট্রাকে করে নিয়ে যায়। তবে ওই এলাকায় আরো তিনটি মেহগনি গাছ শুক্রবার রাতে কে বা কাহারা কেটে নিয়ে গেছে বলে তিনি শুনেছেন।
নীলকণ্ঠপুর গ্রামের চঞ্চল মোড়ল জানান, রবিবার রাত ১১টার দিকে কয়েকজন লোক কুড়াল, কোদাল ও করাত দিয়ে আওয়ামী লীগ অফিসের সামনের মেহগনি গাছটি কেটে নিয়ে গেছে। নির্বাচনের কারণে তখন আওয়ামী লীগ অফিসটি খোলা ও জমজমাট ছিল। এ সংক্রান্ত ভিডিওটি দেখে বোঝা যাচ্ছে যে কারা এ কাজ করেছে। তাদের পরিচয় বের করা কঠিন হবে না।
ধারদিয়া চৌরাস্তা বাজারের নৈশ প্রহরী ফেরাজতুল্লাহ গাজী জানান, রাত ১১টার দিকে যখন গাছটি কাটা হয় তখন দূরের নবকুমারের দোকানে চা খাচ্ছিলেন। ওই এলাকায় তখন নৈশপ্রহরী আব্দুল মালেক ছিল। গাছ নিয়ে যাওয়ার পরপরই সরসকাটি ফাঁড়ির পুলিশ সেখানে এসেছিল।
জয়নগর ইউপি’র ৮নং ওয়ার্ড সদস্য রওশান আলী খাঁ জানান, ওটি ছিল একটি মরা মেহগনি গাছ। তিনি গাছটি কেটে নিয়ে যাওয়ার কথা শুনেছেন। তবে পাশে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারনার অফিস করার সুবিধার্থে গাছটি কাটা হয়ে থাকতে পারে।
জয়নগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার পাল জানান, ২০০৪ সাল থেকে তিনি এ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। চৌরাস্তার আওয়ামী লীগ অফিসটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অফিস নয়, ওটা সভাপতির ব্যক্তিগত ভাড়া করা অফিস। রাতে গাছ কাটার ঘটনাটি ছিল ওই এলাকার বহুল আলোচিত। এ নিয়ে রবিবার সকাল থেকে মুখরোচক আলোচনা তাকে শুনতে হয়েছে।
জয়নগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও ধানদিয়া চৌরাস্তা বাজার কমিটির সভাপতি মাষ্টার আজিজুর রহমান রবিবার বিকেলে এ প্রতিবেদককে জানান, রবিবার রাত ১১টার আগে তিনি বাসায় চলে যাওয়ার কারণে গাছ কাটার ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। সোমবার সকাল ১১টার দিকে তিনি অফিসে এসে গাছ কাটার বিষয়টি শুনেছেন।
দলীয় নির্বাচনী খরচ যোগাতে অফিসের সামনের গাছসহ অন্য আরো তিনটি গাছ কেঠে তিনি বিক্রি করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দু’ বছর আগে মরে যাওয়া অফিসের সামনের গাছটির ডাল কে বা কাহারা কেটে নিয়ে যায়। গাছটির দাম হয়তো ৫০০ টাকা হতে পারে। তবে অফিস খোলা থাকাকালিন সময়ে কে বা কাহারা গাছটি কেটেছে তা নিয়ে তিনি খোঁজ খবর নেবেন।
এবিষয়ে ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান বলেন, পাশর্^বর্তী ধানদিয়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আনিছুর রহমানের বাড়ির পেছনে বাঁশ বাগানে গতকাল ভোর রাতে কে বা কারা কেটে নেয়া গাছের মধ্যে একটি মেহগনি গাছের গুড়ি ফেলে রেখে যায়। গাছটি এখনো সেখানো সেখানে আছে। সেটি জব্দ করা জরুরী।
জয়নগর ইউনিয়ন ভ‚মি অফিসের ভ‚মি কর্মকর্তা মোকাররাম হোসেন জানান, রবিবার সরকারি ছুটি থাকায় তিনি কিছু বলতে পারছেন না। সোমবার অফিসে যেয়ে ঘটনাস্থলগুলোতে যেয়ে খোঁজ নেবেন।