Saturday , 14 December 2024

কবি আলী মুহাম্মাদ এর একান্ত সাক্ষাৎকার

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥

লী মুহাম্মাদ কি আপনার অরজিন্যাল নাম না ছদ্মনাম?

আজ্ঞে, এটা আমার ছদ্মনাম। আমার অরজিন্যাল নাম মোঃ নজরুল ইসলাম। যেহেতু নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবির নাম তাই ও নামটা আমি এড়িয়ে গেছি।

ওও,আচ্ছা, লেখালেখির দিকে আপনি এলেন কিভাবে একটু খোলাসা করে বলবেন কি?

সত্যি বলতে কি ? আমি কোন প্ল্যান-প্রোগ্রাম করে লেখালেখিতে আসি নি। ছেলেবেলা থেকেই পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন গল্প-কবিতার বই আমাকে খুব টানতো। সেগুলো পড়ে আমি খুব আনন্দও পেতাম।তারপর ক্রমে ক্রমে কবে লেখালেখিত চলে আসি।যতটুকু মনে পড়ে ক্লাশ-থ্রীতে পড়াকালীনই সময়েই আমি উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর গুপি গায়েন বাঘা বায়েন,শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রামের সুমতি, বোরহানের গরু কোরবানীকে কেন্দ্র করে হিন্দু রাজার বিরুদ্ধে হযরত শাহজালাল শাহের বিদ্রোহ সংক্রান্ত গল্পের বইগুলো পড়ে ফেলেছিলাম।আর এ সময় থেকেই পড়ার এক অদ্ভূদ নেশা আমাকে পেয়ে বসে যা বর্তমান অবধি সমানতালে টিকে আছে।

আপনি জীবনে কোন বিষয়টি প্রথম লিখেছিলেন তা মনে পড়ে কি?

জ্বী,হ্যা, যতটুকু মনে পড়ে তৃতীয় শ্রেণীতে থাকাকালীন সময়েই আমি জীবনে প্রথম একটা কবিতা লিখেছিলাম,
“ইচ্ছ, ইচ্ছা, ইচ্ছা,
বই পড়া মোর ইচ্ছা্,
বই পড়লে জানা যায়,
হরেক রকম কিসসা,
ইচ্ছা,ইচ্ছা,ইচ্ছা,
বই পড়া মোর ইচ্ছা।

আনসারী-বা বেশ তো। এরপর আর কবে কি লিখেছেন, মনে পড়ে কি?

জ্বী,হ্যা, এর মধ্যে খুঁটিনাটি অনেক কিছুই লিখেছি তবে অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়ে লিখেছিলাম মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রশংসায় একটি কবিতা যার প্রথম চার লাইন ছিল এ রকম,
“সর্বযুগে, সর্বগুণে শ্রেষ্ঠ ছিলেন মোদের নবী,
রুপ-গুণের পূর্ণতায় তিনি ধরায় ধ্যাণের ছবি,
তাঁর ন্যায় চরিত্রবান পাবে না আর ধরার কোথাও,
তাঁর নূরের রৌশনীতে জমাট আঁধার হলো উদাও।”

আনসারী-বা! দারুন তো। আচ্ছা,আপনার কি এসব লেখাগুলো এখনও সংরক্ষিত আছে?

আছে কিছু কিছু, তবে অধিকাংশই হারিয়ে গেছে, আমার ব্যক্তিগত ডায়েরীটা হারানোর সাথে সাথে। আর বাকি পুরোটা রাগ করে ফেলে এসেছিলাম আমার মায়ের পেটের বড় ভাইয়ের বাসায়, যেখান থেকে ঠিক রাত সাড়ে এগারোটার সময়ে আমি বেরিয়ে এসেছিলাম যার সাথে আজ অবধি তথা বিশ বছরেও মনের ঘেন্নায় কথা বলিনি বা যোগাযোগ করি নি।

আনসারী-বাব্বা!আপনি বেশ জেদী আছেন মনে হচ্ছে। তো ঘটনাটা কি কিঞ্চিৎ বলা যাবে?

জ্বী,না। সে এক লম্বাচড়া কিসসা। এ ক্ষুদ্র পরিসরে সে আলাপে যেতে চাই না।

আনসারী-ও,ও,বেশ সে কথা অন্যদিন হবে। এখন বলেন, আপনার প্রথম বই কবে,কোথা থেকে কিভাবে প্রকাশিত হয়?

আমার প্রথম বইটি প্রকাশিত হয় ২০০৬ সালের একুশে বইমেলায় কবি তৌহিদুল ইসলাম কনক ভাইয়ের আমীর প্রকাশনী থেকে। এ বইয়ের কবিতাগুলো ২০০৪ সালের পয়েলা জানুয়ারী থেকে রচিত। মূলতঃ ২০০৪ সালের জানুয়ারী থেকে লেখে আসা কবিতাগুলোই আমার কাছে সুপরিকল্পিতভাবে সংরক্ষিত আছে, আর ২০০৪ সালের আগের লেখাগুলোর অধিকাংশই বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে হারিয়ে গেছে।

বর্তমানে আপনার সর্বমোট কতগুলো বই প্রকাশিত হয়েছে সে সম্মন্ধে কিছু বলবেন কি?

দেখুন ,২০২৩ সালের বইমেলা পর্যন্ত আমার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ২৫ টি। আর সর্বমোট লেখা বইয়ের সংখ্যা একশটি মত।

আনসারী-সে কি? এতগুলো! আপনের বয়স এখন কত চলছে?

এই তো সাইত্রিশ বছর পেরিয়ে গত অক্টোম্বরের ২০ তারিখে ৩৮ এ পড়লো।

আনসারী-আপনের বাসায় তো এক ডজনেরও বেশী পুরস্কার দেখছি, এগুলো তো সবই আপনার মনে হচ্ছে।সাহিত্যের এতগুলো শাখায় হাত দিলেন কি করে?

আমার মতে, জীবনে প্রচুর পড়াশুনার কোনো বিকল্প নেই। প্রচুর জানলে তবেই বিচিত্র্য বিষয়ে লেখার ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। আমি সেই মাধ্যমিক থেকেই প্রতিদিন রুটিন করে কমপক্ষে ১৪ থেকে ১৬ ঘন্টা পড়াশুনার চেষ্টা করে আসছি নিয়মিত এবং এ অভ্যাসটা এখনও ধরে রেখেছি বলা চলে, আপনাদের দোয়া ও মহান রাব্বুল আলামীনের অশেষ কৃপায়। আপনারা দোয়া করবেন যেনো মৃত্যু পর্যন্ত জ্ঞান চর্চার এ মহৎ বৈশিষ্ট্যটি ধরে রাখতে পারি।

আনসারী-অবশ্যই সে দোয়া করবো। এখন আপনার পুরস্কার পাওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু বলুন?

আমি জীবনে প্রথম পুরস্কার পাই, কবি জীবননান্দ দাশ স্মৃতিপদক-২০২১।এটি পাই ‘ভববাদী দর্শন” (একটি মৌলিক দর্শন গ্রন্থ”) নামক গবেষণাধর্মী দর্শন গ্রন্থের জন্যে। এরপর তো সাহিত্যের অন্যান্য বারোটি শাখাসহ আরও তিনটি ইন্ডিয়ান পুরস্কার হাসিল করি। তার মধ্যে ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সত্যজিৎ রায় অডিটোরিয়ামে “মহাত্মা গান্ধী গোল্ডেন এ্যাওয়ার্ড-২০২২” পুরস্কারটি আমার কাছে পরম পাওয়া বলা চলে। কারণ এটা পেয়েছি আমি আমার মহাকাব্যটির জন্য যা আমার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল। এছাড়া “নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ইন্টারন্যাশনাল পীস এ্যাওয়ার্ড-২০২২”, পুরস্কারটি পাই বাংলা সাহিত্যে আধুনিক সনেট কবিতা রচনার জন্যে। সর্বশেষ পেয়েছি,গত মাসের ২৪ শে ফেব্রুয়ারী “বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং সংস্কৃতি ও সভ্যতা” বিষয়ে গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্যে “বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পীস এ্যাওয়ার্ড-২০২৩, পুরস্কারটি ২৬ শে মার্চ তথা গতকাল আমার হাতে এসে পৌঁছিয়েছে।সত্যি বলতে কি, এগুলোর প্রত্যেকটি পুরস্কার ও সম্মাননাই আমার জীবনে পাওয়া এক একটা বড় উপহার।

আনসারী-আপনার পরম পাওয়াই আমরাও খুশি ও গর্ব অনুভব করছি। এখন আপনার মহাকাব্য সম্মন্ধে কিছু বলবেন কি?

জ্বী,হা, কিছুটা বলার চেষ্টা করা যেতে পারে। আমার সনেট মহাকাব্যটি প্রকাশিত হয় ২০১০ সালের এপ্রিলে।।ঐ একই সালের একুশে বইমেলায় মনোছবি প্রকাশনী থেকে আমার একটা সনেট কাব্যও প্রকাশিত হয়, সেটার নাম “মহামানব”। আর মহাকাব্যটির নাম “ভোট”। এটি সনেট কবিতার ন্যায় অষ্টকে অষ্টশতক আর ষষ্ঠকে ষষ্ঠশতক দিয়ে চৌদ্দশত লাইনে এক পর্ব করে মোট পাঁচ পর্বে সাত হাজার লাইনে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যাতে অষ্টশতকে ও ষষ্ঠশতকে, অষ্টক ও ষষ্ঠকের ন্যায় কখকখ বা কখখক এবং গগ,ঘঘ,ঙঙ ইত্যাদি মিলবিন্যাস ঠিক রেখে পুরো মহাকাব্যটি রচিত হয়েছে।

আনসারী-কি বলছেন মহাশয়!এ তো পুরো অসাধ্য সাধন করে ফেলেছেন। প্রতি লাইনে চৌদ্দ অক্ষর করে লিখলেও সাত হাজার লাইন লিখে যাওয়া সো টাফ। আপনার এটা তো এদেশেও মূল্যায়িত হওয়ার কথা ছিল,হয়নি?

উ,হু। কথায় বলে গেয়ো যোগী ভিখ পায় না। আমার অবস্থাও তাই। নইলে কি আর ভারত থেকে এ মহাকাব্যের জন্য পুরস্কার পাওয়ার আগে এদেশে পুরস্কার পেতো না?

 

আনসারী-তা অবশ্য মন্দ বলেন নি। আচ্ছা আপনার আর কি এমন অমর সৃষ্টি আছে বলে মনে করেন?

উউউ,হু, আর দর্শন বিষয়ক গ্রন্থ আছে আটটি যেটাকে দর্শনে কম্পিলিট সেটও বলা যেতে পারে। “ভববাদী দশন” নামে আমি যে মৌলিক দর্শন গ্রন্থের বইটি লিপিবদ্ধ করেছি সেটা এ জাতীর জন্য খুবই দরকারী একটা বই কিন্তু এরা বুঝলো না। এটা বোঝার সুবিধার্থে ব্যাখ্যা স্বরুপ “সমস্যা সমাধানে দর্শনের ভূমিকা” নামক যেটা লিখেছি সেটাও এরা চোখ মেলে দেখলো না। সর্বোপরি ধর্ম দর্শন, রাজনৈতিক দর্শন,অর্থনৈতিক দর্শন,সংস্কৃতি ও ভাষা দর্শন,সমাজ ও আত্মদর্শন এবং আইন দর্শন নামক মৌলিক ছয়টি স্বতন্ত্র গ্রন্থরও মূল্য এরা বুঝলো না বলে বড়ই আক্ষেপ হয় এ জাতীর জন্য।

আনসারী-কিছু মনে না করলে আপনাকে আর একটা প্রশ্ন করি?

জ্বী,করেন।

আনসারী-আপনি নিজেও তো দর্শনের ছাত্র না। কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে লেখাপড়া করেছেন। তো আপনি দর্শন নিয়ে এত ঘাটাঘাটি করলেন কবে?

কথাটা অবশ্য মন্দ বলেন নি। কিন্তু ভাই সাহেব ! বাংলা সাহিত্যে তো বিজ্ঞানের ছাত্রদের আধিপত্যই বেশী। তাছাড়া একজন লেখকের অধ্যয়নের নেশা থাকলে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা নিয়ে জানতে কতক্ষণ।

আনসারী-তা অবশ্য মন্দ বলেন নি।তো আপনার স্বাক্ষাৎকার নিয়ে বেশ ভালই লাগলো। পরে আবার হয়তো বা দেখা হবে,আজকের মত এখানেই সমাপ্ত করছি।ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনাকেও ধন্যবাদ এবং আপনার পত্রিকা ও সকল পাঠকবৃদ্ধকেও ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।

আনসারী-আল্লাহ হাফেজ।

২৭-০৩-২০২৩, সোমবার।

Check Also

মোংলায় যে কোন মুহুর্তে নদীতে বিলিন হতে পারে কোটি টাকায় নির্মিত পৌর খেয়া ঘাট সহ যাত্রী ছাউনী

॥  মাসুদ রানা, বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি ॥ পানির স্রোতে ভাঙনে ক্রমেই আগ্রাসী হয়ে উঠছে মোংলা বন্দরের …