থায় বলে, “দরজার ঘাস গরুতে খায় না” “মক্কার লোক হজ্ব পায় না “। কথা গুলো বলার অর্থ হলো- ঘরের বাইরে বের হলেই আমাদের চারপাশ প্রাকৃতিক নেয়ামতে ভরপুর। প্রকৃতির নিয়মেই সব কিছু পরিচালিত হচ্ছে। প্রাকৃতিক নিয়মে বার্ধক্য আসে কিন্তু কিছু নিয়ম মেনে চললে বহুদিন যৌবন ধরে রাখা যায়। রোগ-ব্যাধিও থেকে দুরে থাকা যায়।
ঘরের বাইরে যে বনৌষধি ভান্ডার আছে তাকে আমরা বিজ্ঞানের আলোকে মানতে রাজি নই। বরং বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত অনুবীক্ষন যন্ত্রে চোখ রেখে সে সব পুরানো আয়ুর্বেদিক উপায়ে আমরা রোগ প্রতিরোধের কঠিন অংক সহজেই মেলাতে পারি।
আয়ু- মানে”জীবন” আর বেদ- মানে “বিশেষ জ্ঞান”। সুতরাং আয়ুর্বেদ মানে জীবনের বিজ্ঞান। যে বিজ্ঞানের মাধ্যমে দীর্ঘায়ু লাভ ও জীবের কল্যান সাধন হয় তা-ই আয়ুর্বেদ। সাড়ে পাঁচ হাজার বছরের পুরানো আয়ুর্বেদ মুলত ভেষজ উদ্ভিদ,প্রানীজ,ও খনিজ দ্রব্যের মাধ্যমে যুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি।
আয়ুর্বেদ চিকিৎসার মুল লক্ষ্য হলো” সুস্থের স্বাস্থ্য রক্ষা করা আর অসুস্থের চিকিৎসা করা”। দৈনন্দিন জীবন ধারার নিয়মকে বলে দিনচর্যা। এই জীবন ধারাই আমাদের সুস্থ ও নীরোগ রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
এ ব্যপারে একেবারে প্রথম সারিতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। এই এন্টিঅক্সিডেন্ট হলে এক ধরনের এনজাইম যা অত্যান্ত নিরাপদে কোষকে ফ্রিরেডিকেল কর্তৃক ধ্বংসের হাত থেকে সুরক্ষা করে এবং ফ্রিরেডিকেল কোষ গুলোকে ধ্বংস করে।
ফ্রিরেডিকেল এক প্রকার ‘দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী’ যারা আমাদের শরীরে দাপটের সাথে চলাফেরা করে। পরিপাক এবং বিপাকের সময় প্রাকৃতিক ভাবে উৎপন্ন হয়ে স্বাভাবিক নিয়মে দেহ থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু অপসারণ প্রক্রিয়ার সময় কিছু ফ্রিরেডিকেল দেহের অভ্যন্তরে থেকে যায় যা কোষের কার্যকলাপ বিঘ্নিত করে। কোষের D,N,A কোষের মেমব্রেন এবং কোষকে মেরে ফেলে। অথচ সু-স্বাস্থ্য নির্ভর করে প্রধানত কিভাবে দেহের কোষ সমুেহ জৈব-রাসায়নিক ক্রিয়া কলাপ পরিচালিত হচ্ছে তার উপর।
অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম, জীবানু সংক্রমণ, মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক সেবন, বারবার ইনফেকশন, বায়ু দূষণ, রাসায়নিক দ্রব্য, কলকারখানার বর্জ্য, যানবাহনের কালোধোঁয়া, X-ray ইত্যাদির কারনে ফ্রিরেডিকেলের সংখ্যা বেড়ে যায়।
অনিয়মিত খাওয়া-দাওয়া, নিত্য দিনের স্ট্রেস, টেনশন, ধুমপান, অতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম ইত্যাদির কারনে আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কমে যায়। আমরা প্রতিদিন যে খাবার খাই তাতে যদি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে তাহলে সমস্যা তৈরি হয় না।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তনালীতে জমে থাকা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল( LDL) অপসারণ, চর্বি অপসারণ, চর্বি জমতে বাঁধা প্রদান, দেহের প্রত্যন্ত অঞ্চলে রক্ত সরবরাহ বৃদ্ধি করে, হার্ট অ্যাটাক এর ঝুঁকি কমায়।
প্রানীজ খারারের চেয়ে উদ্ভিজ খাবারে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি থাকে। পালংশাক, পুইশাক, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, লালশাক, ধনিয়াপাতা, পুদিনাপাতা, সজনে, ডাটাশাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বরবটি, সিম, গাজর, পিঁয়াজ, রসুন, কাঁচামরিচ,কাসুন্দি, আদা,আমলকী, ডালিম, লেবু, আমড়া,টমেটো, তরমুজ, পাকাপেঁপে, পাকা আম, বেদানা, আঙ্গুর,ছোলা, বাদাম, সূর্যমুখির তৈল, চাল, ডাল, গম, আটা, শুকনা কিসমিস, শুকনা খেজুর, দুধ, মাংস, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি।
এ ব্যপারে একেবারে প্রথম সারিতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। এই এন্টিঅক্সিডেন্ট হলে এক ধরনের এনজাইম যা অত্যান্ত নিরাপদে কোষকে ফ্রিরেডিকেল কর্তৃক ধ্বংসের হাত থেকে সুরক্ষা করে এবং ফ্রিরেডিকেল কোষ গুলোকে ধ্বংস করে।
এ সব-ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাদ্য যা শরীরকে নানা রকম রোগ এবং বার্ধক্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলার জন্য শক্তি যোগায়।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে তিন ভাগে ভাগ করেছে। আয়ুর্বেদও অনুরূপ তিন প্রকার যাকে “ব্যাধি ক্ষমত্ব” বলে।
১/ সহজবল(প্রাকৃতিক)- যেটি মানুষ জন্ম সুত্রে পেয়ে থাকে।
২/ কালজবল- এটি নির্ভর করে সময়, ঋতু বা বয়স অনুসারে।
৩/ যুক্তিকৃত বল- যাকে এ্যাকোয়ার্ড ইমিউনিটি বলে।( ভ্যাকসিন বা টিকা) আয়ুর্বেদ এর রসায়ন শাস্ত্র এই যুক্তিকৃত বলকে বাড়াতে সাহায্য করে।
আয়ুর্বেদ চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রচুর তথ্য, ভেষজ উপাদান, দিনচর্যার উল্লেখ আছে যা রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে। আমলকী, হরিতকী, বহেড়া, গুলঞ্চ, নীম, কাঁচা হলুদ, তুলসীপাতা,গোলমরিচ, তেজপাতা, লং, আদা ইত্যাদি হাজার রকমের ঔষধী গুন সম্পন্ন ভেষজ, মসলা, লতাপাতা আমরা অহরহ ব্যবহার করে থাকি।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান আজ এই করোনা মহামারিতে এই সব ভেষজ গুন সম্পন্ন মসলা, লতাপাতা ব্যবহারের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছে। বর্তমানে এন্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা দিন দিন মানব শরীরে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এক ভয়ংকর দিন সামনে অপেক্ষা করছে যখন কোন এালোপ্যাথিক ঔষধ, এন্টিবায়োটিক মানুষের শরীরে কাজ করবে না। ঔষধ কাছে থাকতেও বিনা চিকিৎসায় মানুষ মারা যাবে। চিকিৎসায় কোন ফল হবে না। কাজেই সময় থাকতে সবাইকে স্বাস্থ সচেতন হতে হবে। প্রাকৃতিক মানব দেহের সুস্থতা বা অসুস্থতা আমরা প্রাকৃতিক ভাবেই মোকাবিলা করার অভ্যাস করার চেষ্টা করব। এই হোক আমাদের সকলের কামনা।
কবিরাজ মীর মিজানুর রহমান
বি এ এম এস ( ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
মেডিকেল অফিসার
হামদর্দ ল্যাবরেটরীজ (ওয়াকফ) বাংলাদেশ।