॥ মাসুদ রানা, বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি ॥
সাময়িক বরখাস্তকৃত মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা ডেপুটি ট্রাফিক ম্যানেজার ( ডিটিএম ) মোঃ সোহাগকে স্বপদে পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং বন্দর ব্যবহারীরা। ২১ আগস্ট বুধবার সকালে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১১ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দল মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ’র চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করে ডিটিএম সোহাগকে পদোন্নতিসহ স্বপদে পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দেন।
মোঃ সোহাগ মোংলা পোর্ট পৌরসভার প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান এবং মোংলা সরকারি কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও স্বপ্নদ্রষ্টা, শিক্ষানুরাগী, জাতীয়তাবাদী রাজনীতির মোংলার প্রাণপুরুষ শহীদ আব্দুল বাতেন’র ছোট ছেলে। মোঃ সোহাগ বর্তমানে হাইকোর্টের স্থায়ী জামিনে মুক্ত আছেন।
স্মারকলিপিতে ডিটিএম সোহাগের নামে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়েরের সাথে যুক্ত ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। ২০২২ সালে অফিস ফাইলে মুজিব শতবর্ষের বঙ্গবন্ধুর লোগো কাটাকাটি বিষয়ক বাগেরহাট আদালতে দায়েরকৃত ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় কারাগারে যাওয়ায় বন্দর কর্তৃপক্ষ ডিটিএম মোঃ সোহাগকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে।
মোঃ সোহাগ মোংলা পোর্ট পৌরসভার প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান এবং মোংলা সরকারি কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও স্বপ্নদ্রষ্টা, শিক্ষানুরাগী, জাতীয়তাবাদী রাজনীতির মোংলার প্রাণপুরুষ শহীদ আব্দুল বাতেন’র ছোট ছেলে। মোঃ সোহাগ বর্তমানে হাইকোর্টের স্থায়ী জামিনে মুক্ত আছেন। সাময়িক বরখাস্তকৃত ডিটিএম মোঃ সোহাগ বর্তমানে প্রতি কর্মদিবসে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’র নির্দেশনা মোতাবেক হাজিরা প্রদান করছেন।
আদালত, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, মামলার আর্জি, তদন্ত প্রতিবেদন এবং বাদী-বিবাাদীর সূত্রে জানা যায় গত ২৫/০৩/২১ ইং তারিখ ডিটিএম মোঃ সোহাগের বিরুদ্ধে তৎকালীন পরিচালক (ট্রাফিক) মোস্তফা কামাল, এটিএম কুদরত আলী মুজিব শতবর্ষের লোগো কাটাকাটির মিথ্যা এবং ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগ দায়েরের প্রেক্ষিতে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে। বিভাগীয় তদন্ত কমিটি ডিটিএম মোঃ সোহাগ এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি ।
সাময়িক বরখাস্তকৃত ডিটিএম মোঃ সোহাগ বলেন মোংলা বন্দরে ঘুষ ও চোরাচালান সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা সহকারী ট্রাফিক ম্যানেজার কুদরত আলী মুজিব শতবর্ষের লোগো কাটাকাটির নথিপত্র তার গ্রামের এক আত্মীয় যিনি রামপাল উপজেলা তাঁতীলীগের সভাপতি নাজমুল হাসান শেখ এর নিকট সরবরাহ করেন। তাঁতীলীগ সভাপতি নাজমুল হাসান শেখ গত ০১/০৯/২২ ইং তারিখ মুজিব শত বর্ষের লোগো কাটাকাটির বিষয়ে বাগেরহাট আদালতে ডিটিএম মোঃ সোহাগ এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়ের করেন। আওয়ামী রেজিমের দলীয়করণের প্রভাবে আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে পিবিআই’র অসত্য প্রতিবেদন’র প্রেক্ষিতে গত ২২/০৮/২৩ ইং তারিখ ডিটিএম মোঃ সোহাগকে কারাগারে প্রেরণ করে।
ডিটিএম মোঃ সোহাগ হাইকোর্ট থেকে স্থায়ী জামিনে বের হয়ে গত ০৫/০৯/২০২৩ তারিখ স্বপদে যোগদান করেন। এ সকল ঘটনার প্রেক্ষিতে গত ০৩/ ০৯/২০২৩ ইং তারিখ ডিটিএম সোহাগকে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ পদাবনতিসহ সাময়িক বরখাস্ত করে এবং জুনিয়র কর্মকর্তা ষড়যন্ত্রকারী আওয়ামী সমর্থক কুদরত আলী শেখকে ডেপুটি ট্রাফিক ম্যানেজার পদে চলতি দায়িত্ব প্রদান করে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সাময়িক বরখাস্তকৃত ডিটিএম মোঃ সোহাগ বলেন বন্দরের ট্রাফিক বিভাগ মালামাল আমদানি রপ্তানির সাথে সরাসরি যুক্ত হওয়ায় আমি ইচ্ছা করলে কোটি টাকা সম্পদের মালিক হতে পারতাম। কিন্তু তিনি ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করায় আমাকে কারাগারে যেতে হয়েছে।
মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী মোঃ বিল্লাল হোসেন, সুমন রানা ও ফিরোজ আলম খান বলেন ট্রাফিক বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সরাসরি ঘুষের সাথে জড়িত থাকায় তারা কর্মস্থলে ডিটিএম মোঃ সোহাগকে কোনঠাসা করে রাখেন। মোংলা বন্দরের তৎকালীন পরিচালক (ট্রাফিক) ভারপ্রাপ্ত মোস্তফা কামাল আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার এবং আত্মীয়তার প্রভাব খাঁটিয়ে মোংলা বন্দরে ঘুষ, দুর্নীতি ও চোরাচালানের নিরাপদ জোন তৈরি করেন। তিনি প্রকৃতপক্ষে হিসাব রক্ষণ অফিসার হিসেবে নিয়োগ পেলেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ট্রাফিক পরিচালকের দায়িত্ব দখল করে নেন। মোঃ সোহাগকে তিনি বারবার ঘুষের অফার দিয়েও রাজি করাতে ব্যর্থ হন ।
কারণ ডিটিএম সোহাগ ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মকে ঘৃণাভরে নীতিগত প্রত্যাখান করেন। এবিষয়ে জানতে চাইলে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ’র সাবেক পরিচালক ( ট্রাফিক ) মোস্তফা কামাল বলেন ”লোগো বিকৃতির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের নিকট হতে অবহিত হয়ে বন্দর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয় এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্দেশক্রমে তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য নথি উপস্থাপন করা হয়। এ বিষয়ে আদালতে মামলা যিনি করেছেন তাকে আমি চিনিনা।”
বঙ্গবন্ধুর লোগো বিকৃতি এবং আদালতে মামলা ও ডিটিএম মোঃ সোহাগকে সাময়িক বরখাস্ত বিষয়ে বর্তমান ডিটিএম তৎকালীন এটিএম কুদরত আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি এবিষয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলতে ও তথ্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই’র পুলিশ পরিদর্শক মোঃ ইকরাম হোসেন জানান তখন পরিস্থিতি ভিন্ন ছিলো।
স্বাক্ষীদের কথার উপর নির্ভর করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। উল্ল্যেখ্য মামলার বাদী এবং স্বাক্ষীরা কেউ মোংলা বন্দরের সাথে সংশ্লিষ্ট নন। তাদের বাড়ীও মোংলাতে না। পার্শ্ববর্তী রামপাল উপজেলার তাঁতীলীগ ও আওয়ামীলীগ-যুবলীগ নেতৃবৃন্দ। মামলার বাদী রামপাল উপজেলা তাতীলীগের সভাপতি নাজমুল হাসান শেখ’র সাথে যোগাযোগের চেষ্টার পরেও তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। তিনি খুদে বার্তারও কোন জবাব দেননি।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন মোংলার নেতা ওমর ফারুক সোহেল, সুমন, আরাফাত আমীন দুর্জয়, সাব্বীর হাসান দীপ্ত জানান তীব্র ছাত্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের পতন হওয়ায় অন্তর্র্বতীকালীন সরকার ইতোমধ্যে সকল রাজনৈতিক মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। মোংলা বন্দরের ডিটিএম মোঃ সোহাগ এর বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা প্রত্যাহারসহ পূর্ব নির্ধারিত তারিখে তার পদোন্নতিসহ স্বপদে পুনর্বহালের দাবি জানাই।
একই সাথে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মোংলার নেতৃবৃন্দ ডিটিএম মো: সোহাগের বিরুদ্ধে মিথ্যা এবং ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত আওয়ামী রেজিমের সুবিধাভোগী দালাল কর্মকর্তা অবৈধভাবে পদোন্নতি পাওয়া বর্তমান ডিটিএম কুদরত ও সাবেক পরিচালক ( ট্রাফিক) মোস্তফা কামালসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টামূলক শাস্তি দাবি করেন।##