॥ পিয়াল আহমেদ, জয়পুরহাট প্রতিনিধি ॥
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান। মাদ্রাসায় পড়ার সময় প্রেম হয় একই গ্রামের মতিয়র রহমানের মেয়ে মাহবুবার সঙ্গে। তবে মতিয়র রহমান ছিলেন বিত্তবান, মোস্তাফিজুরের পরিবার দরিদ্র। আর্থিক বিবেচনায় অসম হলেও প্রেমের কথা তারা জানান দুই পরিবারকে। তারা সেই সম্পর্ক মেনে নেন, তবে এক শর্তে- স্বাবলম্বী ও প্রতিষ্ঠিত হতে হবে মোস্তাফিজুরকে। ছাত্রজীবনে জমানো ২ হাজার ২৫০ টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেন সংগ্রাম। কৃষিপণ্য কেনাবেচা থেকে শুরু করে কঠিন পথ পেরিয়ে এখন তিনি সফল খামারি। রয়েছে সার ও কীটনাশকের ব্যবসাও। উপজেলার নুনুজ বাজারে মেসার্স মায়া অ্যান্ড মিশু ডেইরি অ্যাগ্রো ফার্ম নামে মোস্তাফিজুরের খামার এখন সবাই একনামেই চেনেন।
‘প্রেমের সম্পর্কে চ্যালেঞ্জ ছিল দারিদ্র্য। সেই চ্যালেঞ্জ জয় করার প্রত্যয় নিয়েই দুই পরিবারের সম্মতিতে ২০০১ সালে আমাদের বিয়ে হয়। শুরু হয় জীবন সংগ্রামের আরেক অধ্যায়। শ্রমিকের খরচ বাঁচিয়ে দুই পয়সা বেশি উপার্জনের জন্য হিমাগারে রাখা আলুর বস্তা নিজের পিঠে বয়ে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিতাম।
কালাই উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে নুনুজ বাজারে মোস্তাফিজুর রহমান গড়ে তুলেছেন গরুর খামার। সেখানে মোটাতাজা করা হচ্ছে গাভী। পাশাপাশি প্রায় ছয় বিঘা জমিতে জারা, অজানা হাইব্রিড, পাং চুং জাতের ঘাস লাগিয়েছেন। নিজের খামারে গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি সেই ঘাস বিক্রিও করেন। কাজে সহযোগিতার জন্য রেখেছেন পাঁচজন কর্মচারীও।
এ ছাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মিল্ক ক্রিম সেপারেটর মেশিন দেয়া হয়েছে মোস্তাফিজুরকে। নিজেরসহ আশপাশের খামার থেকে দুধ সংগ্রহ করে সেই দুধ থেকে ক্রিম আলাদা করে সেই দুধ বাজারজাত করা হয়। আলাদা করা ক্রিম থেকে তৈরি হয় নানা দুগ্ধজাত পণ্য।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রেমের সম্পর্কে চ্যালেঞ্জ ছিল দারিদ্র্য। সেই চ্যালেঞ্জ জয় করার প্রত্যয় নিয়েই দুই পরিবারের সম্মতিতে ২০০১ সালে আমাদের বিয়ে হয়। শুরু হয় জীবন সংগ্রামের আরেক অধ্যায়। শ্রমিকের খরচ বাঁচিয়ে দুই পয়সা বেশি উপার্জনের জন্য হিমাগারে রাখা আলুর বস্তা নিজের পিঠে বয়ে ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিতাম। এরপর ২০০৭ সালে ৯ শতক জায়গার ওপরে উপজেলার নুনুজ বাজারে সার ও কীটনাশকের ব্যবসা শুরু অল্প করে টাকা জমাতে শুরু করি। ২০১৯ সালে ১৫ শতক জায়গায় দুটি অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের গাভী দিয়ে শুরু করি মায়া অ্যান্ড মিশু ডেইরি অ্যাগ্রো ফার্ম প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করার প্রথম ধাপ।’
মোস্তাফিজুরের খামারে এখন দেশিবিদেশি বিভিন্ন জাতের ৫৯টি গাভী রয়েছে। এগুলোর দাম প্রায় ৫০ লাখ টাকা। এ ছাড়া সার ও কীটনাশক ব্যবসা শুরু করেন তিনি, যেখানে আরও প্রায় ৫০ লাখ টাকার বিনিয়োগ রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কম পুঁজি হলেও বেশি পরিশ্রম আর সততার মাধ্যমে দারিদ্র্য জয় করে আজ এই পর্যায়ে এসেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি সবার জন্য অনুকরণীয়।
কালাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. হাসান আলী দৈনিক বাংলাকে বলেন, মোস্তাফিজুর রহমান একজন সফল খামারি। অদম্য ইচ্ছা শক্তি আর একনিষ্ঠ পরিশ্রমের মাধ্যমে এত দূর এসেছেন। তাকে একটি ক্রিম মেশিন দেয়া হয়েছে। নিয়মিত তার খামারে সার্বক্ষণিক দেখাশোনা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।