॥ আবুল হোসেন, রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি ॥
পানির অভাবে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূর রাজবাড়ী সদর উপজেলার কলারহাট থেকে নসিমন বোঝাই করে পাট জাগ দিতে পদ্মা নদীতে এসেছেন কৃষক আনোয়ার খা। এ বছর তিনি তিন বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। ফলন ভালো হলেও বিপাকে পড়েছেন পাট জাগ দেওয়া নিয়ে। তার মতো গোয়ালন্দ-ফরিদপুর-তাড়াইল সড়কের (বেড়িবাঁধ) ভিতরে অবস্থিত শত শত কৃষক বিপাকে পড়েছেন।
গোয়ালন্দে ভারতীয় তোষা জাতের বীজের আবাদ বেশি। এ বছর গোয়ালন্দে ৪ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে পাট আবদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে। দাম বেশি পাওয়ায় প্রায় ২১০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ বেশি হয়েছে।
উপজেলার উজানচর ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। মঙ্গলবার সকালে বেড়িবাঁধের ভিতর উজানচরের রিয়াজ উদ্দিন পাড়া, মৈজদ্দিন মন্ডল পাড়াসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ জুড়ে কাটার উপযোগী পাট রয়েছে। অনেক স্থানে পাট কেটে মাঠেই ফেলে রাখা হয়েছে। আবার কিছু স্থানে পাট ঘোড়ার গাড়ি বা নসিমনে করে জাগ দিতে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, সাধারণত বছরের মার্চ মাসের শেষে বা এপ্রিল মাসের শুরুতে বাংলা ফাল্গুন মাসের শেষে বা চৈত্র মাসের শুরুতে পাটের বীজ রোপনের উপযুক্ত সময়। বীজ বোপনের পর ১১০ থেকে ১২০ দিন পর পাট কাটার উপযোগী হয়। পাট কাটার পর জাগ দিতে সাধারণত ৩ থেকে ৪ ফুট পানি হলেই চলে।
তবে আরো গভীর এবং পরিস্কার পানি হলে আরো ভালো। গোয়ালন্দে ভারতীয় তোষা জাতের বীজের আবাদ বেশি। এ বছর গোয়ালন্দে ৪ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে পাট আবদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে। দাম বেশি পাওয়ায় প্রায় ২১০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ বেশি হয়েছে।
শনিবার (৫ আগষ্ট ) দুপুরে দুটি নসিমন বোঝাই করে কৃষক আনোয়ার খা পাট জাগ দিতে আসেন দৌলতদিয়া নুরু মন্ডল পাড়া পদ্মা নদীর ক্যানালে। তিনি বলেন, নিজ বাড়ি থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূর রাজবাড়ীর কোলার হাট গ্রামে তার বাড়ি। প্রতি ট্রিপ নসিমন ভাড়া ১,২০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে।
তিন বিঘার পাট নিতে তার সাড়ে ৭ হাজার টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে। তার মতো কয়েক হাজার কৃষক স্থানীয়ভাবে পাট জাগ দিতে না পারায় ৩০-৪০ কিলোমিটার পথ দুরে ছুটছেন। এতে তাদের বাড়তি খরচসহ ভোগান্তি পড়তে হচ্ছে।
উজানচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মৃধা বলেন, এ বছর প্রায় ৯০হাজার টাকা খরচ করে ৬ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। পাটের পরিপক্কতা হলেও পানির অভাবে কাটছেননা। বেড়িবাধের ভিতর শুধু উজানচরের প্রায় ৩০০ একর জমির পাট মাঠে পড়ে আছে।
এক হাজারের বেশি কৃষক অনাবৃষ্টি, খড়া আর পানি না থাকায় সহসা পাট কাটছেননা। সকলে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছেন। নিচু বা ডোবা এলাকায় বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ তৈরী হলে সবাই পাট কাটতে শুরু করবে। এছাড়া এখান থেকে পাট কেটে অন্যত্র জাগ দিতে নিলে অতিরিক্ত খরচ এবং বাড়তি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।
দৌলতদিয়া তোরাপ শেখ পাড়ার কৃষক হুমায়ন আহম্মেদ বলেন, তিনি এ বছর ৩ বিঘা জমিতে পাট রোপন করেছেন। পাট ভালো হলেও উৎপাদন খরচ বেশি। তার প্রতি বিঘা জমিতে পাট রোপনে খরচ হয় ১৭-১৮ হাজার টাকা। এক বিঘা জমি শনকরা বাবদ ৩ হাজার, জমি তৈরীতে ১,৫০০, শ্রমিক বাবদ ২,৫০০, বীজ বপনে ৫০০, কাটতে ২৫০০, ধুতে ২,৫০০, ওষুধ বাবদ ৩-৪ হাজারসহ ১৭-১৮ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।
নিজস্ব জমি থাকলে শনকরার ৩ হাজার টাকা বাদে ১৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। গোয়ালন্দ বাজারে নসিমন বোঝাই পাট নিয়ে আসা চালক আব্দুর রাজ্জাক সরদার বলেন, ৩৫ কিলোমিটার দূর রাজবাড়ীর বসন্তপুর থেকে নিয়ে যাচ্ছেন উজানচর নতুন পাড়া।
পাটের মালিকের নিকট আত্মীয় হওয়ায় তাদের এলাকায় জাগ দিতে নিচ্ছেন। এ জন্য তাকে ১ হাজার টাকা ভাড়া দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৬টি ট্রিপ দিতে পারছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোকন উজ্জামান বলেন, পাটের আবাদ ভালো হলেও অনাবৃষ্টি, খড়ার কারনে অনেকে পাট জাগ দিতে পারছেননা। আগে রিবন পদ্ধতিতে পাট জাগ দেওয়ার পরামর্শ দেয়া হলেও বাড়তি ঝামেলা, অতিরিক্ত খরচের কারনে রিবন পদ্ধতিতে আগ্রহি নন। এ কারনে প্রকৃতির ওপর নির্ভর করা ছাড়া উপায় নেই কৃষকদের।