॥ আবুল হোসেন, রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি ॥
তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) মানুষ হিসেবে কোনো মর্যাদা ছিল না। রাস্তাঘাটে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের পাশাপাশি নানা কটুবাক্য ছুড়ে দিত লোকজন। মানুষের কাছে চেয়ে-চিন্তে খাওয়া সমাজের অবহেলিত এক জনগোষ্ঠীর মানুষের এভাবেই দিন কেটেছে। ২০১৩ সালে তারা পেযেছে নাগরিত্ব। এখন তৃতীয় লিঙ্গের এসব মানুষের মর্যাদা ফিরেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানে আশ্রয়ও মিলেছে।
এতে আমরা অত্যন্ত খুশি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর একটি দাবী সে যাতে আমাদের একটা কর্ম সংস্থানের সৃষ্টি করে দেয়।
সরকারের তরফে থেকে নেওয়া পুনর্বাসনের নানা পদক্ষেপে এখন বদলে গেছে তাদের জীবনযাত্রা। এখন তৃতীয় লীঙ্গের সদস্যদের একটাই দাবী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের যাতে একটা কর্মসংস্থান করে দেয়া হয় যাতে তাদের অন্যের কাছে হাত পেতে কিছু না নিতে হয়।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের মাহিরা। তাদেরকে দৌলতদিয়া ইউনিয়নে গফুর মন্ডল পাড়া এলাকায় ১ন; খতিয়ান ভুক্ত ২২ শতাংশ জমি সহ ঘর দিয়েছে সরকার। তারা আশ্রয়ণের আঙ্গিনা এবং ঘর সাজিয়েছে নিজেদের মনের মাধুরি মিশিয়ে। তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যরা ঘর পাবার আনন্দে আতœহারা হয়ে গেছেন। শাক সবজি, ফল এবং সবুজে পরিপূর্ণ ঘরের চার পাশ।
তারা এখন আশ্রয়ণ প্রকল্পে ওঠার পর প্রতিনিয়ত হাসি-আনন্দে সময় পার করছেন। কেউ ছাগল, হাঁস-মুরগি ও কবুতর পালন করছেন। কেউ শাক-সবজি চাষ করছেন। এখানে তৃতীয় লিঙ্গের ৭ সদস্যকে ২২ শতাংশ জমির উপর পুনর্বাসন করা হয়েছে। তারা প্রত্যেকেই জমির মালিকানাসহ পাকা ঘর পেয়েছেন।
শুধু তাই নয়, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা যেন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে এজন্য গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগী,শাক সবজি ও মাছ চাষের মতো ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এক সময়ের অনাশ্রিত তৃতীয় লিঙ্গের অসহায় মানুষেরা এখন স্বপ্ন দেখছে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন আয়বর্ধক কাজের।
তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য রোকেয়া আক্তার, রনি চৌধুরী, অন্তরা খাতুন, বলেন, আমরা বাবা ,মা ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম, সমাজের কাছে ছিলাম অবহেলিত। আগে আমাদের কোনো পরিচয় ছিলো না। সরকার এখন আমাদের ডিজিটাল আইডি কার্ড দিয়েছে। আমরা জমি সহ ঘর পেয়েছি।
এতে আমরা অত্যন্ত খুশি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর একটি দাবী সে যাতে আমাদের একটা কর্ম সংস্থানের সৃষ্টি করে দেয়।
গোয়ালন্দ উপজেলা তৃতীয় লীঙ্গের সভানেত্রী মাহিয়া মাহি বলেন, আমার বাংলাদেশের নাগরিক ছিলাম না, ২০১৩ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আমাদের নাগরিকত্ব দিয়েছে। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে আমাদের জমি সহ ঘর দিয়েছে। আমাদের পরিবার ও সমাজের লোক যেটুকু ভালো না বাসতো, প্রধানমন্ত্রী তার চেয়ে বেশি ভালোবাসেন।
তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘজীবী হোন। তৃতীয় লীঙ্গের সদস্যদের কর্মসংস্থানের দরকার। আমাদের প্রতিভা কে কাজে লাগিয়ে কর্মসংস্থানের দিকে এগিয়ে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, তৃতীয় লীঙ্গের সদস্যরা মানবতার জীবন যাপন করতো। তাদের কে সেখান থেকে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে অগ্রাধিকার প্রকল্প, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় লীঙ্গের সদস্যদের জন্য জমি সহ সেমি পাকা ঘর নির্মাণ করে দিয়েছি।
সেখানে তারা এখন হাসিখুশি ভাবে বসবাস করছে। বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য তাদের নানা ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।