॥ এ আর রাজু, উল্লাপাড়া (সিরাজঞ্জ) প্রতিনিধি ॥
দফায় দফায় সুতা, রঙসহ তাঁত কাপড়ের কাঁচামালের দাম বাড়ায় তাঁতের কাপড় তৈরি করে উৎপাদন খরচও তুলতে পারছে না দেশের বৃহত্তম তাঁত সমৃদ্ধ অঞ্চল সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার প্রান্তিক তাঁতিরা ফলে এবার ঈদকে সামনে রেখে তাঁতী পাড়ায় অনেকটাই থেমে গেছে খুটখাট শব্দ।সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া ঐহিত্যবাহী তাঁত সমৃদ্ধ এলাকায়। কিন্তু বর্তমান সময়ে তাঁত শিল্পের উপকরণের মুল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বাপ দাদার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন তাঁত মালিকরা। যে হারে উপকরণের মুল্য বৃদ্ধি পেয়েছে,সে হারে উৎপাদিত কাপড়ের মুল্য বাজারে না পাওয়ায় তাঁত মালিকরা এ পেশা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।
কাপড় বিক্রি করে পরিবহন ভাড়া তুলতেই হিমসিম খেতে হচ্ছে। আর এসব কারনেই হারাতে বসেছে ঐতিহ্য এই তাঁত শিল্প। তাই অনেক তাঁত মালিকরা বাপ-দাদার এ পেশা ছেড়ে বাড়ি ঘর রেখে ঢাকা পাড়ি জামাচ্ছেন। অনেক মালিকের তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে।
উপজেলার,বালসাবাড়ী,নেওয়ারগাছা,পাইকপাড়া,দাঁতপুর,নতুনদাঁতপুর,ইসলামপুর,মহেশপুর,গাড়লগাঁতী,এনায়েতপুর সহ অনেক এলাকা তাঁত সমৃদ্ধ হিসেবে পরিচিত। এ সব এলাকায় তাঁত শিল্পে বাহারি রকমের শাড়ী,লুঙ্গি, গামছা, উৎপাদিত হয়ে থাকে। সকালে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে খট খট শব্দে মুখরিত হয়ে যেত উল্লাপাড়ার তাঁতী পাড়ায়।
কিন্তু বর্তমানে তাঁত শিল্পের ধস নামায় এ শব্দ আগের মত আর শোনা যায় না। উৎপাদিত এসব পন্য স্থানীয় শাহজাদপুর হাট সহ বিভিন্ন কাপড়ের হাটে বিক্রি হয়ে থাকে। আর এসব হাট থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা কাপড় কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে এবং বিদেশেও রপ্তানী করে থাকে।
এবিষয়ে কথা হয় তাঁত মালিক আলামিন হোসেন ,আঃ ছোবাহানের সাথে তারা বলেন,আগে একসময় হাটে কাপড়ের অনেক চাহিদা ছিলো তাই তাঁত মালিকদের কদরও ছিলো বেশ। কিন্তু বর্তামানে যে হারে উপকরণের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে সে হারে কাপড়ের মুল্য বাজারে নেই।
কাপড় বিক্রি করে পরিবহন ভাড়া তুলতেই হিমসিম খেতে হচ্ছে। আর এসব কারনেই হারাতে বসেছে ঐতিহ্য এই তাঁত শিল্প। তাই অনেক তাঁত মালিকরা বাপ-দাদার এ পেশা ছেড়ে বাড়ি ঘর রেখে ঢাকা পাড়ি জামাচ্ছেন। অনেক মালিকের তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে।
এসময় কথা হয় তাঁত শ্রমিক বাচ্চু মিয়া ও ফজলু মিয়ার সাথে ওনারা বলেন,বর্তমান সময়ে বাজারে দ্রব্য মুল্য যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে,কিন্তু তাঁত শ্রমিকদের মজুরি কম । কাজ করলে মহাজন টাকা দেয়, না করলে নাই। এছাড়াও অনেক তাঁত মালিকরা তাঁত বিক্রি করে দিয়েছে। তাঁত শ্রমিক এজন্য পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম কষ্টে জীবন যাপন করছে।
উল্লাপাড়া উপজেলায় তাঁতের সংখ্যা রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার,আর এই তাঁত শিল্পের সাথে পরক্ষভাবে জড়িতে রয়েছে ১৫ হাজার পরিবার। বর্তমানে তাঁত শিল্পের করুন অবস্থা। রং সুতার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দিশেহারা তাঁত মালিকরা। অনেক তাঁত মালিকরা এর কারনে তাঁত বন্ধ করে ফেলেছে।
তাঁত কাপড়ের ব্যবসার সবচেয়ে বড় মৌসুম হওয়ায় প্রতি বছর রোজার ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত হয়ে উঠে সিরাজগঞ্জের তাঁতিরা। করোনার পর থেকেই আশানুরুপ ব্যবসা করতে পারেনি তাঁতিরা, লোকসান পুষিয়ে নিতে এ বছর ধার কর্য করে কারখানা চালু করলেও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এবং বাজারে আশানুরুপ কাপড় বিক্রি না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে তাঁতিরা।
তাঁতিরা জানান, তাঁত কাপড়ের কাঁচামাল রঙ ও সুতার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত এক বছরে প্রতিটি সুতার দাম ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে অথচ কাপড়ের দাম সে তুলনায় বাড়েনি ফলে লোকসানের মুখে পরতে হচ্ছে তাদের।
এদিকে তাঁত কাপড়ের পাইকারি ব্যবসায়িরা জানান, এবার ঈদের কাক্সিক্ষত বেচাকেনা করতে পারছে না তারা। তাঁতিরা জানান, ঈদে কাক্সিক্ষত ব্যবসা করতে না পারলে মূলধন হারিয়ে পথে বসতে হবে তাদের।
তবে ঈদের শেষ মুহূর্তে বেচাকেনা বাড়তে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা। সরেজমিনে তাঁত পল্লিগুলো ঘুরে দেখা গেছে ক্রমাগত লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে অধিকাংশ প্রান্তিক তাঁতিরা ইতিমধ্যে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। বড় ব্যবসায়ীরা অর্ধেকের বেশি তাঁত বন্ধ রেখে কোনরকম কারখানা চালু রেখেছে। তাঁত শিল্পকে বাঁচাতে তাঁতিরা সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।